বন্যায় নষ্ট যন্ত্রপাতি, ৯ মাস বিদ্যুৎবিহীন ৪ গ্রামের মানুষ
দুর্গম হাওর এলাকার মানুষের ঘরে ঘরে জ্বলবে বিদ্যুতের আলো। শিক্ষার্থীরা সেই আলোতে বসে পড়বে। প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যের। এমনটাই ছিল প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এ কারণে প্রকল্প নিয়ে খুশি ছিল হাওরপারের মানুষ। কিন্তু ৬ বছরের মাথায় এসে প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। অন্ধকারেই বসবাস করতে হচ্ছে ৪ গ্রামের মানুষদের।
জানা যায়, হাওর বাওরের জেলা সুনামগঞ্জের সবচেয়ে দূর্গম এলাকা শাল্লায় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চালু হয় ‘ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প’। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের যৌথ অর্থায়নে এ প্রকল্পে প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয় হয়। ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। মৌরাপুর, আগুয়াই, বিলপুর, শাসখাই গ্রাম ও শাসখাই বাজারের মানুষ এ প্রকল্পের গ্রাহক। কিন্তু গ্রাহকদের উপকারের বদলে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের আগুয়াই-শাসখাই বাজারের মধ্যবর্তী স্থানে চার একর জমির ওপর এটি স্থাপন করা হয়েছে। শাসখাই বাজার থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে শাসখাই হাওরপারে প্রকল্পের অবস্থান। সেখানে যাওয়ার রাস্তাও ভাঙাচোরা। সড়কের পাশ ঘেঁষে এবং হাওরের ওপর দিয়ে ছোট ছোট খুঁটি দিয়ে প্রকল্প থেকে লাইন গেছে মানুষের বসতবাড়ি ও বাজারের দোকানপাটে। এসব খুঁটি এখন বিভিন্ন স্থানে হেলে পড়ায় স্থানীয় মানুষ বাঁশ দিয়ে বেঁধে রেখেছেন।
প্রকল্পের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পের ভেতরে মাটি থেকে সামান্য উঁচুতে সারবদ্ধভাবে ২ হাজার ২৩টি প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় রয়েছে দুটি দোতলা পাকা ভবন। একটিতে রয়েছে যন্ত্রপাতি ও প্রকল্পের লোকদের থাকার ব্যবস্থা। অন্যটি শুরু থেকেই তালা দেওয়া। এমনকি শুরুতে প্রকল্প থেকে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হয়। এরপর ধীরে ধীরে সময় কমতে থাকে। পরে দিনে মাত্র দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেওয়া হলেও গত ১৬ জুনের ভয়াবহ বন্যায় প্রকল্পের ভিতরে পানি ডুকে সকল যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে অকেজ হয়ে যায়। ফলে দীর্ঘ ৯ মাস যাবৎ বিদ্যুৎ বিহীন এই সব গ্রামের মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
তারা জানান, ‘আমরা এ প্রকল্পে আর থাকতে চাই না। কারণ বিদ্যুৎ বিহীন আমরা চার গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। সারা বাংলাদেশে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ'র আলো জ্বললেও আমরা এখনও অন্ধকারে।
স্থানীয় বাসিন্দা আইজার আলী জাগো সিলেটকে বলেন, ৯ মাস যাবৎ ৪ গ্রাম বিদ্যুৎ বিহীন। বন্যায় প্রকল্পের সব যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়। এতে আমরা খুব ভোগান্তিতে পড়েছি।
স্থানীয় বাসিন্দা চন্দন বর্মণ জাগো সিলেটকে বলেন, বিদ্যুৎ ছাড়া আমরা খুব কষ্টে আছি। দিনে কোন রকম বিদ্যুৎ ছাড়া থাকলে রাতে থাকা একদম অসম্ভব তাই দ্রুত এই প্রকল্পটি মেরামত করে সচল করে দেওয়া হোক।
স্থানীয় বাসিন্দা রাজিব বর্মণ জাগো সিলেটকে বলেন, আমরা আর এই প্রকল্পে থাকতে চাই না। আমরা পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগে যেতে চাই। কারণ অন্ধকারে বসবাস করতে আর ভালো লাগছে না আমাদের।
সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান জাগো সিলেটকে বলেন, বন্যায় সোলার প্রকল্পে পানি ডুকে অনেক যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো মেরামতের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
শাল্লা উপজলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব জাগো সিলেটকে বলেন, বন্যায় সোলার প্রকল্পে সকল যন্ত্র নষ্ট হওয়ায় ৪টি গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। ফলে তাদেরকে আমরা দ্রুত পল্লী বিদ্যুৎ'র আওতায় আনার চেষ্টা করছি।