বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে, আমি দমে যাইনি
বিশেষ প্রতিনিধি ||
বারবার বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলার মধ্য দিয়ে আমি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু আমি দমে যাইনি। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, আমাকে দমানো যায় না। শনিবার বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নবনির্মিত ১৫তলা ভবন উদ্বোধন শেষে সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। তিনি একউ সঙ্গে বিচার বিভাগের জন্য তার সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি জেলায় সিজিএম আদালত নির্মান, নতুন ট্রাইব্যুনাল করা হয়েছে। বিদেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিচারের মান উন্নত করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২২তলা বিশিষ্ট বিজয় একাত্তর ভবন নির্মান করা হয়েছে। বিচারকদের আবাসন সমস্যা দূর করতে বিচারপতিভবন নির্মান করা হয়েছে। আদিমপুরে জাজেস কোয়ার্টার নির্মান হয়েছে, আইনজীবী সমিতি ভবন করে দেওয়া হয়েছে। আর্থিকভাবে যত সচ্ছলতা আসবে, পর্যায়ক্রমিকভাবে আরও সুযোগ করে দিতে পারবো। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার এই পর্যায়ে পুরো সমাবেশ হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়ে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে আমার শর্ত আছে। আমি চাই আইনজীবী সমিতির ভবন কেবল বড় বড় শহরে না অন্যান্য শহরে যখন হবে তখন আইনজীবীদের পক্ষ থেকেও সক্রিয় হতে হবে। আমরা সকল জেলায় যারা নিয়োজিত আছে সরকারি আইন কর্মকর্তা প্রত্যেকের মাসিক রিটেইন ফি বৃদ্ধি করেছি। অনুরোধ থাকবে, আপনারা জানেন বিএনপি কত নেতাকর্মী হত্যা করেছে, চোখ তুলে নিয়েছে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ২০২৩ সালে জামায়াত বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। যারা অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, যারা পুলিশ হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষ হত্যা করেছে, চলমান বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে। এসবের সাথে যারা জড়িত, জেলায় জেলায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। এরা এত অন্যায় করেছে, তাদের শাস্তি হবে না কেনো? তাদের শাস্তি দেরিতে হবে কেনো? সে বিষয়ে আপনাদের নজর দিতে হবে। অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে এরা বাড়বে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা অনেকে লুকিয়ে ছিলো। আবার বের হয়ে এসেছে। আন্দোলনে তাদের আমরা বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু সেই মামলাগুলো কেবল চালালে হবে না, সাজা নিশ্চিত করতে হবে। ন্যায়বিচার যেনো মানুষ পায়। স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে বেচে থাকা যে কী কস্ট আমরা যারা হারিয়েছি তারা জানি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, ৩ নভেম্বরের হত্যাকান্ড, এসবের সাথে জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী জড়িত। এটা সবার জানান। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মধ্য দিয়ে খুনিদের রেহাই দিয়ে তাদেরকে নানা জায়গায় চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিলো। এই হত্যাকান্ডের ফলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছিলো জিয়ারউর রহমান। তার হাতে মুক্তিযোদ্ধা, সেনা অফিসার, সৈনিকদের হত্যার শিকার হয়েছে। সে অন্যায়ভাবে একেকটা দিনে ১০জন করে ফাঁসি দিয়েছে। ঢাকা রাজশাহী খুলনা বগুড়া সেনানিবাসে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। অবশ্যই তাদের বিচার বাংলাদেশে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আইনজীবীদের জন্য, বিচারপতিদের জন্য যেসব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সেসবের উল্লেখ করে বলেন, আমরা সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছি। এটা গ্রহণ করলে মাসে যে টাকাটা রাখবেন, যখন কাজ করতে পারবেন না প্রতি মাসে পেনশন তুলতে পারবেন যেটা আপনাদের বৃদ্ধ বয়সে কাজে লাগবে। কারো মুখাপেক্ষি হয়ে থাকতে হবে না। তিনি বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত করা আমাদের লক্ষ্য। একটি মানুষও ভূমিহীন গৃহহীন থাকবে না। ৮লক্ষ ৪০ হাজার পরিবারকে বিনামূল্যে ঘর দেওয়া হয়েছে।
নারী শিশু নির্যাতন দমন আদালত করেছি। বিচার যেনো পান সে ব্যবস্থা করবেন। প্রত্যেক জেলায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। করোনা ফান্ড থেকে ২০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছি। বার কাউন্সিল ভবন আজ উদ্বোধন করা হলো। এ টাকাকে সরকারকে আমরাই দিয়েছি। অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা এতে আছে। শতিাধিক আইনজীবীর থাকার ব্যবস্থা এখানে থাকবে। স্মার্ট জুডিশিয়ারি যেনো হয় তারজন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি ও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আইনজবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আইনজীবী মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগদান করেন প্রধানমন্ত্রী।