বিএনপির হমালায়ই মৃত্যু হয়েছে কিশোর রুমনের মা বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিএনপি কর্মীদের হামলায়ই মৃত্যু হয়েছে কিশোর জাহেদ হাসান রুমনের। ১৫ বছর বয়সি ওই কিশোর মিরসরাইয়ের বারৈরহাটের আজমপুর বাজারে একটি কারওয়াশের দোকানে চাকরি করত। স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ঘটনায় শনিবার একটি হত্যা মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে বলে মিরসরাই থানা সূত্রে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৬ অক্টোবর চট্টগ্রামে বিএনপির রোড মার্চকে ঘিরে শুক্রবার বারৈরহাট পরিদর্শন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এম শাহাজাহানসহ দলের নেতাকর্মীরা। কুমিল্লা থেকে চট্টগাম যাবার পথে বারৈরহাটে বিএনপি কোন পথ সভা করবে কি না, দলটির সভা করার প্রস্তুতি আছে কি না- এসব বিষয় সরেজমিন দেখে চলে যান কেন্দ্রীয় নেতারা।
অপরদিকে একইদিনে অর্থাৎ ৬ অক্টোবর আওয়ামী লীগ চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি স্পটে সমাবেশ করবে। এরই অংশ হিসেবে বারৈরহাটেও একটি সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। সেই সমাবেশকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও প্রতিদিন মিরসরাইয়ের রারৈরহাটসহ আশপাশের এলাকার ছোট ছোট মিটিং করছেন।
স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, শুক্রবার বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা চলে যাবার পর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক ও মিরসরাইয়ের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নূরুল আমিনের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা ওসমানপুরের আজমপুর বাজারে অবস্থান নেন। সেখানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও অবস্থান করছিলেন। এক পর্যায়ে নূরুল আমিনের উপস্থিতিতেই দুই দলের নেতাকর্মীরদের মধ্যে প্রথমে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। পরবর্তিতে সেটি সংঘর্ষে রূপ নেয়।
বিএনপি নেতাকর্মীরা ধাওয়া দিলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দিগ্ববিদিক ছুটোছুটি করে। এসময় আওয়ামী লীগের দুই জন কর্মী আত্মরক্ষার জন্য স্থানীয় একটি কারওয়াশের দোকানে ঢুকে। বিএনপি কর্মীরা সেই দোকানে হামলা চালালে আওয়ামী লীগের দুই কর্মী এবং কারওয়াশের কর্মচারী জাহেদ হাসান রুমন প্রাণ বাঁচাতে দৌড় দেন। তাদের পিছু ধাওয়া করে বিএনপি কর্মীরা। এক পর্যায়ে তারা রুমনকে পিছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে। রক্তাক্ত রুমন কয়েক কদম দৌড়ে গিয়ে একটি পুকুরে পড়ে যান।
খবর পেয়ে আজমপুর বাজারের ব্যবসায়ী রুমনের মামা ইউনূস নবীসহ ছাত্রলীগ কর্মীরা ১৫-২০ মিনিট পর রুমনকে পুকুর থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রুমনের মৃত্যুর খব ছড়িয়ে পড়লে মুহুর্তেইে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আজমপুর বাজারে জড়ো হতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মী ও স্থানীয় লোকজন আজমপুর বাজার সংলগ্ন চট্টগ্রাম উত্তরা জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক ও মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল আমিনের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।
হত্যাকাণ্ডের পর পরই মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগ রুমেনকে তাদের কর্মী বলে দাবি করে। এ ঘটনা তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করে এবং বিএনপির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানায়।
অপরদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে দাবি করা হয়, নিহত রুমন তাদের কর্মী। তবে এর স্বপক্ষে তারা কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
রুমনের মামা ইউনূস নবী অভিযোগ করে বলেছেন, বিএনপির নেতাকর্মীরাই তার ভাগ্নেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। মাথায় কোপানোর পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাকে ধাওয়া দিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।
এদিকে ওই হত্যাকাণ্ডের পর শুক্রবার রাতেই আজমপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ বিএনপির পাঁচ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
শনিবার দুপুরে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, রুমন হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এটি এখন প্রক্রিয়াধীন। রুমনের মা খালেদা আক্তার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করছেন।
এক প্রশ্নে জবাবে, তিনি বলেন, রুমন কোন দলের কর্মী সেটা এখনই বলা যাচ্ছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।