ব্র্যান্ড পোশাক স্টোর থেকে সরিয়ে নেওয়া নতুন কিছু নয়
বিভিন্ন দেশের নামীদামী ব্র্যান্ডের পোশাক বিভিন্ন সময় স্টোর থেকে তুলে নেয়। ক্রেতাদের অভিযোগ এবং সমালোচনার মুখে বা কোন ‘ভুল বুঝাবুঝির’ পরিস্থিতি তৈরি হলেও অনেক দেশেই অনেক নামীদামী ব্র্যান্ডের পণ্য সরিয়ে নেওয়ার নজির আছে। মূলত পোশাকের ডিজাইন, লেখা এমনকি রং নিয়েও সমালোচনার মুখে পোশাক বাজার থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনা আছে। দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সম্প্রতি বাংলাদেশের তৈরি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের পোশাক তুলে নেওয়ার খবরে তাই উৎকণ্ঠিত হওয়ার কিছুই নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তৈরি পোশাক প্রস্তুকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্র্যান্ডের ক্রেতাদের অনেক চাহিদাপত্র থাকে। কাপড় নির্বাচন, পোশাকের আনুসাঙ্গিক উপকরণ সবই ক্রেতার সিদ্ধান্তে অনুমোদিত হয়ে থাকে। সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। গুণগত মান নিরীক্ষা করে, স্যাম্পলের কোয়ালিটি চেকের পর প্রডাকশনে যায় কারখানাগুলো। আর পোশাক রফতানির আগে পুনরায় কোয়ালিটি চেকের পর তা জাহাজে পাঠানো হয়। ডিজাইন থেকে শুরু করে সব কিছুই নির্ধারণ করেন ক্রেতা, সুতরাং এখানে কারখানার দায় থাকার কথা না।
আগের বেশকিছু সিদ্ধান্ত অনুসন্ধানে দেখা যায়, ক্রেতাদের অভিযোগের মুখে বিভিন্ন সময় ব্র্যান্ডের পোশাক বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশ না ভিয়েতনাম, চীন, কম্বোডিয়ার মতো দেশও আছে।
গত এপ্রিলে ওয়ালমার্টে বিক্রির জন্য জর্জ ব্র্যান্ডের টি-শার্ট এর গায়ে একটি ‘গালি’ লুকানো দেখে প্রতিষ্ঠানটি বাজার থেকে তা সরিয়ে নেয় বলে এক প্রতিবেদনে জানা যায়। ১১ এপ্রিল ডেইলি মেইলের বরাত দিয়ে ফক্স বিজনেসের একটি প্রতিবেদনে একথা বলা হয়। জর্জ ব্র্যান্ডটি ওয়ালমার্টের মালিকানাধীন।
পরিবেশপন্থী টিশার্টটি মানুষকে ‘পুনর্ব্যবহার’, ‘পুনরায় ব্যবহার’ এবং ‘পুনর্বিবেচনা’ করার আহ্বান জানাতে গিয়ে টি শার্টের গায়ে ‘আর-ই’ ব্যবহার করা হয় এবং ‘সাইকেল’ (রিসাইকেল), ‘ইউজ’ (রিইউজ), ‘নিউ’ এবং ‘থিঙ্ক’ শব্দগুলো একটু বেশি ডানে সরিয়ে দেওয়া হয়। আর এতেই ঘটে বিপত্তি। তাদের আর-ই অক্ষরগুলো ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। হিতে বিপরীত হতে দেখা যায়।
এরপর গত মে মাসের শুরুতে প্রাইড মাস উপলক্ষ্যে চালু করা ‘টার্গেট’ ব্র্যান্ডের পণ্যগুলো নিয়ে নির্দিষ্ট গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়ার মুখে তাদের স্টোর থেকে কিছু পণ্য সরিয়ে নিতে হয়। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়। উল্লেখ্য, প্রাইড মাস মুলত সমকামী সম্প্রদায়ের জন্য উৎসবের মাস হিসেবে উদযাপন করা হয়।
টার্গেট কর্পোরেশন (টিজিটিএন) তার ‘প্রাইড’ কালেকশনের অংশ হিসাবে পোশাক, বই, সংগীত এবং বাড়ির আসবাবপত্রসহ ২০০টিরও বেশি পণ্য সরবরাহ করছে। আইটেমগুলির মধ্যে রয়েছে "জেন্ডার ফ্লুইড" মগ, ক্যালেন্ডার এবং ‘বাই বাই, বাইনারি’, ‘প্রাইড ওয়ান, টু, থ্রি’ এবং "আমি মেয়ে নই" শিরোনামে ২-৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য বই।
এক বিবৃতিতে টার্গেট বলেছে, ‘এই বছরের পণ্যগুলো বাজারজাত করার পর থেকে আমরা আমাদের কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও সুস্থতার বিষয়গুলো হুমকির মুখে পড়েছে।
এরপর গত আগস্টে কেনিয়ায় তৈরি শিশুদের প্রায় ৯৭ হাজার পিস জিন্সের প্যান্ট যুক্তরাষ্ট্রের স্টোর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় শিশুদের নিরাপত্তার স্বার্থে। সেদেশের গণমাধ্যম বলছে, প্যান্টের কাপড় থেকে শিশুদের শরীরের খোঁচা অনুভব হচ্ছে- এমন অভিযোগে সেসব তুলে নেওয়া হয়। একই অভিযোগে পণ্যগুলো কানাডার বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
ফাঙ্গাসের উপস্থিতির কারণে কানাডার টাইগার ব্র্যান্ডের কিছু পণ্য যেমন স্লিপওয়্যার, প্যান্ট এবং স্কি প্যান্ট প্রত্যাহার করা হয় গত জানুয়ারি মাসে। বানকি বার, বেলা অ্যান্ড বার্ডি, মাউন্টেন রিজ, সারভাইভাল গিয়ার এবং ক্যারিশমার মতো স্লিপওয়্যারগুলো প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়াও পুরুষদের শেরপা পোশাক, পাজার স্কি প্যান্ট এবং পুরুষদের স্কি প্যান্ট ছিলো প্রত্যাহার করা পোশাকের তালিকায়।
হেলথ কানাডা ভোক্তাদের অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্থ পণ্যব্যবহার বন্ধ করতে এবং পুরো অর্থ ফেরতের জন্য জায়ান্ট টাইগারের কাছে ফেরত দিতে বলে।
গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে এক বার্তায় জায়ান্ট টাইগার বলেছে, ‘যেহেতু আমাদের গ্রাহকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা আমাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার, তাই আমরা এ বিষয়ে আমাদের বিক্রেতা এবং হেলথ কানাডার সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করছি।
বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা সামগ্রী প্রত্যাহার করা হলে সেটির তথ্য প্রকাশ করে ওইসিডি প্ল্যাটফর্ম। সেখানে গত অক্টোবর মাসে চীনের তৈরি শিশু পোশাক প্রত্যাহার করা হয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে। পোশাকটির সমস্যা হসিএবে উল্লেখ করা হয়েছে- লেবেল থেকে ত্বকে খোঁচা লাগতো।
বাংলাদেশের ঘটনাকে আলাদা করে উল্লেখ করার মতো কোন বিষয় নেই। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ জানান, বাংলাদেশ সব সময় বায়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী পোশাক বানায়। কিন্তু অভিযোগ বা মানদণ্ডগুলো সবই উক্ত পোশাকের ডিজাইন যারা করেছে, বা বিবরণ যারা ঠিক করেছে তাদের বিষয়। বাংলাদেশে বায়ারের সকল নির্দেশনা মেনে, বেধে দেওয়া মানদণ্ড মেনে পোশাক তৈরি করা হয়েছে। তৈরি করা পোশাক তৃতীয় পক্ষের ইন্সপেকশন আর ল্যাব টেস্ট পাশ করার পরেই রপ্তানি করা হয়েছে। তাই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পণ্যের চাহিদামাফিক মান রক্ষা করেই রপ্তানি করা হয়েছে।