মধ্যবয়সে সূর্য, ভবিষ্যতে কী হবে বললেন বিজ্ঞানীরা
আমাদের গ্রহ পৃথিবীসহ গোটা সৌরজগতের প্রাণকেন্দ্র নক্ষত্র সূর্য তার মধ্যবয়সে পৌঁছে গেছে। এই পরিস্থিতিতে সূর্যের মধ্যে নানা পরিবর্তন শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন ইউরোপের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। সূর্যের সম্ভাব্য আয়ু এবং পরিণতিও তারা বর্ণনা করেছেন।
২০১৩ সালে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ইসা) মহাকাশে পাঠিয়েছিল গাইয়া নামক একটি মহাকাশযান। এই মহাকাশযানটির কাজ ছিল মহাকাশের বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্রের সম্পর্কে তথ্য সঞ্চয় করা। এই গাইয়ার দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করেই সূর্য সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে ইসা।
সম্প্রতি ইসা সূর্য বিষয়ক একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, সূর্যের বয়স বর্তমানে ৪৫৭ কোটি বছর। এই বয়সে এসে সূর্যের মধ্যে বিভিন্ন পরিবর্তনের লক্ষণ শুরু হতে পারে বলে গবেষণা প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব লক্ষণ মধ্যে রয়েছে— সূর্যের বিস্তার বৃদ্ধি, সূর্যের ভেতরকার অভিকর্ষ কমতে থাকায় উত্তপ্ত তরল মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়া এবং ঘণ ঘণ সৌরঝড়। ইউরোপের বিজ্ঞানীরা এসব লক্ষণকে বলেছেন সূর্যের মধ্যবয়সী সংকট (মিডলাইফ ক্রাইসিস)।
মহাকাশের অজস্র অজস্র নক্ষত্রের মতো সূর্যও একটি মাঝারি আকৃতির নক্ষত্র। সূর্যকে ঘিরেই গঠিত হয়েছে সৌরজগত বা সৌরপরিবার। এই পরিবারের সমস্ত গ্রহ-উপগ্রহ প্রত্যক্ষ বা পরক্ষোভাবে সূর্যকে কেন্দ্র করেই নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে।
সাড়ে ৪০০ কোটি বছরেরও বেশি সময় ধরে সূর্যের ভেতরে অনবরত হাইড্রোজেন পরমাণু পরস্পর যুক্ত হয়ে তৈরি করছে হিলিয়াম পরমাণু। বিজ্ঞানের ভাষায় এই প্রক্রিয়াটিকে বলে ‘নিউক্লিয়ার ফিউশন’। আর এই প্রক্রিয়াতেই তৈরি হয় বিপুল পরিমাণ শক্তি।
ইসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, সূর্যের ভিতরে হাইড্রোজেনের পরিমাণ যখন কমে আসবে, তখন তার প্রভাব পড়বে এই প্রক্রিয়ায়। ধীরে ধীরে নিভে আসবে সূর্য। কিন্তু কবে ঘটবে এই ঘটনা?
কোন নক্ষত্রের আয়ু কত দিন, তা অনেকটাই নির্ভর করে তার ভরের উপর। গাইয়া থেকে অন্যান্য নক্ষত্রের যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তা সূর্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। আর সেই তথ্য বলছে, ৮০০ কোটি বছরে গিয়ে সর্বোচ্চ উষ্ণতায় পৌঁছবে সূর্য। তার পর থেকেই ক্রমশ শীতল হতে থাকবে এই নক্ষত্র।
উষ্ণতা যত কমবে ততই বাড়বে সূর্যের আয়তন। ক্রমে লাল রাক্ষুসে নক্ষত্রে পরিণত হবে সূর্য। প্রায় ১১০০ কোটি বছর বয়সে পুরোপুরি মৃত্যু হবে সূর্যের।