যে কারণে সিলেটে এতো লোডশেডিং

যে কারণে সিলেটে এতো লোডশেডিং

জ্বালানি সাশ্রয়ের পরিকল্পনায় সরকারের সূচি করে লোডশেডিংয়ের পরিকল্পনায় ঘোষণা ছিল দিনে এক ঘণ্টা করে বন্ধ থাকবে বিদ্যুৎ। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই বিদ্যুতের যাওয়া আসা ছিল এর চেয়ে বেশি।

সিলেটের পরিস্থিতি শুরু থেকেই ছিল সবচেয়ে বেশি খারাপ। এখন তা খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে।

রোববার রাতে সিলেটে বিদ্যুৎ গেছে একবারই, তবে তা এক ঘণ্টার জন্য নয়, তীব্র গরমে টানা পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় নির্ঘুম সময় পার করতে হয়েছে। লোডশেডিংয়ের সময় ঘরে বিদ্যুৎ চালু রাখতে যে আইপিএস ব্যবহার করা হয়, তার চার্জও থাকে না এতক্ষণ।

রোববার রাত ১২ টা থেকে সোমবার ভোর ৫টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না প্রায় পুরো সিলেটে। এরপর বিদ্যুৎ আসলেও সেই ‘সুখ’ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দুই ঘণ্টা পর আবার শুরু হয় লোডশেডিং।

দিনের বেলাতেও কিছুক্ষণ পরপর ছিল যাওয়া আসা করছে। সব মিলিয়ে এদিন ১২/১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল সিলেট।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, রোববারের লোডশেডিং সিলেটের বিতরণ কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার- এনএলডিসি থেকেই সিলেটের জাতীয় গ্রিড লাইনের সাবস্টেশনের সুইচ অফ করে দেয়া হয়। ফলে এই গ্রিড সাব স্টেশনের আওতাধীন সিলেট ও সুনামগঞ্জের গ্রাহকরা দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎহীন ছিলেন।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুতের গ্রিডকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ, পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করে থাকে এনএলডিসি। দেশের সব বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিতরণ ও গ্রিড উপকেন্দ্র এবং ট্রান্সফরামের নিয়ন্ত্রণ থাকে এই সংস্থার কাছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে সমন্বয়হীনতা দেখা দিলে এবং ফ্রিকোয়েন্সি কমে গেলে এনএলডিসি অনেক সাব স্টেশনের সুইচ অফ করে দেয়া হয়। তা না হলে পুরো দেশই ব্ল্যাক আউটে চলে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘রোববার সারাদিনে এনএলডিসি থেকে ৭/৮ বার সিলেটের গ্রিড লাইন উপকেন্দ্রের সুইচ বন্ধ করে দিয়েছে। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্তও সুইচ বন্ধ ছিল। ফলে পুরো সিলেটই বিদ্যুৎহীন ছিল।’

রোববার সিলেটে উৎপাদন ও সরবরাহে সমন্বয়হীনতা ছিল কি না- জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি কেবল সিলেটের প্রেক্ষাপটে বলা যাবে না। দেশের যে কোনো জায়গায়ই সমস্যা হতে পারে। রোববার ঢাকায় লোড বেশি টানছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’

ঢাকায় লোড বেশি টানার কারণে সিলেটের গ্রিড লাইনের সুইচ অফ করে দেয়া কেন- এমন প্রশ্নে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড- পিডিবি সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, ‘এটা আমাদেরও প্রশ্ন। তাছাড়া এমন সমস্যা দেখা দিলে সাধারণ গ্রাম এলাকার সাব স্টেশনের সুইচ অফ করে দেয়া হয়। শহরেরটা করা হয় না। কারণ, শহরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকে। এগুলোতে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকলে সমস্যা।’

সিলেটের সাবস্টশেশনগুলোর বিদ্যুৎ সরবরাহ এভাবে হুটহাট বন্ধ না করার জন্য এনএলডিসিকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে জানান আব্দুল কাদির।

বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সিলেট-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল করিম বলেন, ‘যখনই ন্যাশনাল গ্রিডে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় তখনই এনএলডিসি থেকে সিলেট নগরের শেখঘাট, উপশগর ও বরইকান্দি সাব স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে লোডশেডিং ছাড়া সিলেট নগর বিদ্যুৎহীন হয়ে পরে। তখন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।’

গরম বাড়ায় সিলেটে লোডশেডিংও বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির। তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন গরম কম ছিল। তাই লোডশেডিংও কম ছিলো। রোববার থেকে গরম বেড়েছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে কিন্তু সরবরাহ বাড়েনি।’

সোববার দুপুরে সিলেটে বিদ্যুতের চাহিদা ১৯০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১০৫ মেগাওয়াট সরবরাহ মিলছে বলে জানান তিনি।

সিলেটজুড়ে বইছে তাপপ্রবাহ। রোববারও অসহনীয় গরম ছিল সিলেটে। সোমবার দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সিলেটে, ৩৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে রাতভর বিদ্যুৎহীনতার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সিলেটের বাসিন্দাদের।

নগরের মিরাবাজার এলাকার বাসিন্দা আজাদ আহমদ বলেন, ‘সারাদিন কিছুক্ষণ পরপর বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করেছে। আর রাতে বিছানায় শোয়ার সঙ্গে সঙ্কেই বিদ্যুৎ চলে যায়, এরপর আর পুরো রাতে ফেরেনি। তীব্রগরমের মধ্যে বিদ্যুতহীনতার কারণে রাতে আর বাসার কেউ ঘুমাতে পারেনি।’

রাতে ওসমানী হাসপাতালেও বিদ্যুৎ ছিল না জানিয়ে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাশিদ আহমদ বলেন, ‘গরমে রোগীদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।’

বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন স্থগিত রেখেছে সরকার। ১৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সভায় ১৯ থেকে দেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক শেষে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, প্রথমে একঘণ্টা করে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করা হবে। তাতে সংকট না কমলে বাড়ানো হবে।

তবে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত সিলেটে প্রথমদিন থেকেই মানা হচ্ছে না। কোথাও কোথাও ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকার তথ্যও আসছে।

লোডশেডিং নিয়ে পরের পরিকল্পনা আর প্রকাশ করেনি সরকার। তবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বর থেকে লোডশেডিং কমে আসবে আর অক্টোবরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে তারা আশা করছেন।