সুনামগঞ্জে সাত খাল রক্ষায় ডিসি-মেয়রসহ ১৩ জনকে আইনি নোটিশ

সুনামগঞ্জে সাত খাল রক্ষায় ডিসি-মেয়রসহ ১৩ জনকে আইনি নোটিশ

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের উত্তর আরপিননগরের সুরমা নদী থেকে যে খালটি বিভিন্ন এলাকা হয়ে দেখার হাওরে গিয়ে পড়েছে, সেটির নাম কামারখাল। এই খালে একসময় নৌকা চলত। শহরের পানি নিষ্কাশনে মূল ভূমিকা ছিল কামারখালের। কিন্তু কামারখাল বহু আগেই অস্তিত্ব হারিয়েছে। খালটি এখন কোথাও কোথাও ছোট্ট নালাতে পরিণত হয়েছে। আবার কোথাও খালের ওপর বড় বড় পাকা ভবন, দোকানপাট গড়ে উঠেছে।

সুনামগঞ্জ শহরে দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়া এমন সাতটি খাল উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পৌরসভার মেয়রসহ ১৩ ব্যক্তিকে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষ থেকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বেলার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস হাসানুল বান্না বৃহস্পতিবার ডাকযোগে এ নোটিশ পাঠান। নোটিশে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের তেঘরিয়া খাল, বড়পাড়া খাল, কামারখাল, বলাইখালী খাল, ধোপাখালী খাল, নলুয়খালীখাল ও গাবরখালী খালের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এসব খাল উদ্ধারে প্রয়োজনীয় প্রতিকার চেয়ে যাদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে, তারা হলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র, পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পওর বিভাগ-১) নির্বাহী প্রকৌশলী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)।

নোটিশে বলা হয়েছে, একসময় সাতটি খালেই নৌকা চলাচল করত এবং শহরের পানি নিষ্কাশনে অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছিল। দেশের অন্যান্য নদী-খালের মতো এ খালগুলো দখল হয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কামারখালসহ অন্যান্য দখলকৃত খাল দখলমুক্ত করতে স্থানীয় এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন জানায়, কিন্তু অদ্যাবধি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এতে এলাকাবাসীও কার্যকর কোনো প্রতিকার পাননি। কামারখাল, তেঘরিয়া খাল, বড়পাড়া খাল ও বলাইখালী খাল দখল করে গড়ে উঠেছে স্থাপনা, রাস্তা ও বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে খালগুলো সরু নালায় পরিণত হয়েছে। দখলের কারণে কোথাও কোথাও খালগুলো প্রায় নিশ্চিহ্ন। এতে শহরের পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে শহরের জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। বেলার প্রতিনিধিদল সরেজমিন এ চিত্র দেখেছে।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী খাল দখলমুক্ত রেখে যথাযথভাবে সংরক্ষণে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। খালগুলোর প্রাথমিক প্রবাহ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ (উৎপত্তি থেকে পতিতমুখ পর্যন্ত প্রকৃত দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ নিরুপণসহ) করে যথাযথ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। এ বিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে নোটিশ পাঠানোর সাত দিনের মধ্যে নোটিশদাতাকে অবহিত করার জন্যও অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বেলার সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক আইনজীবী শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে যেমন দাবি আছে, তেমনি আমরাও এসব খাল উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করেছি, দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নেওয়ার কারণেই এই আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেছেন, ‘এবারের ভয়াবহ বন্যায় আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেটিকে সামনে রেখে শহরের উন্নয়ন এবং যেসব স্থানে খাল উদ্ধার সম্ভব, সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে ইচ্ছা করলেই সবকিছু আগের অবস্থায় ফেরানো সম্ভব হবে না। আমরা অনেক জায়গায় খাল দখলমুক্ত করেছি। ইতিমধ্যেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হয়েছে। আরও কাজ হবে।’