সুপার ফোরে বাংলাদেশ
এশিয়া কাপের ষোড়শ আসরে প্রথম ম্যাচ শ্রীলংকার কাছে লজ্জার হারের পর সুপার ফোরে যাওয়ার সমীকরণ বেশ কঠিন হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ডু অর ডাই ম্যাচে জয় ছাড়া আর কিছু ভাবার উপায় ছিল না টাইগারদের। তবে সেই ম্যাচে কি দারুণ খেলাই না উপহার দিল সাকিব বাহিনী। আফগানদের ৮৯ রানে উড়িয়ে সুপার ফোর নিশ্চিত করল বাংলাদেশ।
ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো জানায়, এই জয়ের ফলে আফগানিস্তান রান রেটে বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে গেল অনেক, শ্রীলঙ্কাকে তারা ছোট ব্যবধানে হারালেও বাংলাদেশকে টপকে যেতে পারবে না। আবার শ্রীলঙ্কা যদি বড় ব্যবধানে হারে, তাহলে তাদের রানরেট নেমে আসবে বাংলাদেশের নিচে। তাই এমন কোন সমীকরণ নেই যেখানে বাংলাদেশ বাদ পড়ে।
হারলেই বাড়ি ফিরতে হবে। এর থেকে চাপের বাক্য বোধহয় একটা দলের জন্য আর নেই। এমন সমীকরণ মাথায় নিয়েই আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে লাহোরে মাঠে নামে বাংলাদেশ। তবে মেহেদি হাসান মিরাজ-নাজমুল হোসেন শান্তর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে সেই চাপ সামলে রানের পাহাড় গড়ে টাইগাররা। ৩৩৫ রানের বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে পাঠায় আফগানদের।
জবাবে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই শরীফুলের আঘাতে আফগানদের প্রথম উইকেট হারায়। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ওই ধাক্কা সামলে নেন অভিজ্ঞ ব্যাটার ইব্রাহিম জাদরান ও রহমত শাহ। পরে তাসকিন ও হাসান মাহমুদ তাদের ফিরিয়ে স্বস্তি আনে বাংলাদেশ শিবিরে।
আফগানদের হারিয়ে সুপার ফোরে বাংলাদেশ
সুপার ফোরের আশা দেখছে বাংলাদেশ
কিন্তু পরে নজিবুল্লাহ জাদরানকে নিয়ে জুটি গড়ে আফগানদের ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করতে থাকেন আফগান অধিনায়ক শহীদি। রান তোলার গতিও বাড়ায় আসরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা আফগানরা। অস্বস্তিতে থাকা বাংলাদেশকে স্বস্তি এনে দেয় আজকের বড় সংগ্রহের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। মিরাজ তার বোলিংয়ে লুপ দিচ্ছিলেন, এবার ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন একটু। তাতেই প্রলুব্ধ হয়ে স্লগ করতে গিয়েছিলেন নজিবুল্লাহ জাদরান, কিন্তু লাইনে যেতে না পেরে হয়েছেন বোল্ড। ম্যাচের প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।
এরপর শরীফুল ইসলামের আঘাত। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আউটসাইড-এজড হয়ে ডিপ থার্ডম্যানে ধড়া পড়েছেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি, যিনি আশা জোগাচ্ছিলেন আফগানিস্তানকে। অধিনায়ক ফেরার পর কাজটি আরও কঠিন হয়ে পড়ে তাদের। বাকি ব্যাটাররা চাপ নিতে না পারায় ২৪৫ রানে শেষ হয় আফগান ইনিংস। এর ফলে ৮৯ রানের জয়ে সুপার ফোর নিশ্চিত হলো টাইগারদের। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নেন তাসকিন। এর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট আসে শরীফুলের বল থেকে। মেহেদী ও হাসান পান একটি করে উইকেট।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্তর শতকে পাঁচ উইকেটে ৩৩৪ রান করে টাইগাররা।
অধিনায়ক তামিম ইকবাল একবার বলেছিলেন, দলের হার নিশ্চিত ভেবে সবাই যখন হাল ছেড়ে দেয়, তখনো জয়ের জন্য আত্মবিশ্বাসী দেখা যায় মেহেদী হাসান মিরাজকে। সেই কথাই যেন আবারও প্রমাণ দিলেন এই অলরাউন্ডার।
বিপদে দল, আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারলে টানা দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেবে বাংলাদেশ। ওপেনার সংকট। ইনজুরির কারণে স্কোয়াডে নেই তামিম ইকবাল ও লিটন দাস।
এশিয়া কাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মিরাজকে ওপেনিংয়ে নামায় টিম ম্যানেজম্যান্ট। ওয়ানডেতে এর আগে একবারই ওপেনিং করেন তিনি। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে। সে ম্যাচে লিটনের সঙ্গে ১২০ রানের ওপেনিং জুটিতে মিরাজের অবদান ছিল ৫৯ বলে ৩২ রান।
ওপেনিং মোহাম্মদ নাঈমের সঙ্গী মিরাজ। সর্বশেষ ৬ ম্যাচে এটি পঞ্চম ওপেনিং জুটি। দুইজন মিলে স্কোর বোর্ডে তোলেন ৬০ রান। দশম ওভারে ৩২ বলে ২৮ রান করা নাঈমকে ফিরে এই জুটি ভাঙেন মুজিব উল হক।
ব্যাটিং অর্ডারে এগিয়ে আনা হয় তাওহিদ হৃদয়কে। কিন্তু দুবল ব্যবধানে ডানহাতি এই ব্যাটারকে (০) ফেরান গুলবাদিন নাঈব। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু নাজমুল হোসেন শান্ত ও মিরাজের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। ৬৫ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতক করেন মিরাজ। আর অর্ধশতক করতে শান্ত খরচ করেন ৫৭ বল।
ধীরে ধীরে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন দুজন। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক তুলে নেন মিরাজ। ১১৫ বলে ৬টি চার ও দুটি ছক্কা এই মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। এরপর শতক করেন শান্ত। তিনি খেলেন ১০১ বলে ৯টি চার ও দুটি ছক্কা এই শতক করেন। একই ইনিংসে পঞ্চমবারের মতো শতক পেলেন বাংলাদেশের দুজন ব্যাটার। সর্বশেষ এই কীর্তি গড়েছিলেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস, ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
মিরাজ-নাজমুল মিলে গড়েন ১৯৪ রানের জুটি। এশিয়া কাপে যে কোনো উইকেটে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগে ডাম্বুলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ইমরুল কায়েস ও জুনাইদ সিদ্দিকের ১৬০ রানের জুটিটি ছিল সর্বোচ্চ।
মুজিবকে ছক্কা হাঁকানোর পর ১১৯ বলে ১১২ রানের রিটায়ার হার্ট নেন মিরাজ। আর শান্ত (১০৪) ফিরেন রান আউট হয়ে। শেষ দিকে মুশফিকুর রহিম (১৫ বলে ২৫), সাকিব আল হাসান (১৮ বলে ৩২*) ও অভিষিক্ত শামীম হাসান পাটোয়ারীর (৬ বলে ১১) ক্যামিও ইনিংসে ৫ উইকেটে ৩৩৪ রানের স্কোর পায় বাংলাদেশ।