গোয়ানইঘাটে ট্রিপল মার্ডার

স্ত্রী সন্তানদের মৃত্যুর পর 'অজ্ঞান হবার অভিনয়' করেছিলেন স্বামী!

স্ত্রী সন্তানদের মৃত্যুর পর  'অজ্ঞান হবার অভিনয়' করেছিলেন স্বামী!

সিলেটের গোয়ানইঘাটে দুই সন্তানসহ এক নারীকে হত্যার ঘটনায় ওই নারীর স্বামী হিফজুর রহমানকেই (৩৫) সন্দেহ করছে পুলিশ।

হিফজুর আহত অবস্থায় পুলিশ প্রহরায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তার আচরণ প্রথম থেকেই সন্দেহজনক বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বুধবার সকালে গোয়ানঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণ পাড়া গ্রামের নিজ ঘর থেকে হিফজুরের স্ত্রী আলিমা বেগম (৩০), তার দুই সন্তান মিজান (১০) এবং তানিশা (৩)। ওই ঘর থেকেই হিফুজরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

ঘটনার পর পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলো সম্পত্তিসংক্রান্ত বিরোধ থেকে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত এবং বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এখন পুলিশের সন্দেহের তীর আহত হিফজুরের দিকেই।

এই ঘটনার তদন্তের সাথে সম্পৃক্ত পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হিফজুর রহমান প্রথম থেকেই সন্দেহজনক আচরণ করছেন। প্রথমে আমরা তা বুঝতে পারিনি। তিনি ঘরের ভেতরে অজ্ঞানের ভান করে পড়েছিলেন। তবে হাসপাতালে নেওয়ার পর বুঝা যায় তার আঘাত গুরুতর নয়।

হিফজুরকে সন্দেহের কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাইরে থেকে কেউ হত্যার জন্য এলে সাথে করে অস্ত্র নিয়ে আসতো। তাদের ঘরের বটি দা দিয়েই খুন করতো না। বিরোধের কারণে খুনের ঘটনা ঘটলে প্রথমেই হিফুজরকে হত্যা করা হতো কিংবা স্ত্রী সন্তানদের প্রথমে হামলা করলেও হিফুজর তা প্রতিরোধের চেষ্টা করতেন। এতে স্বভাবতই তিনি সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হতেন।

অথচ হিফুজরের শরীরের আঘাত একেবারেই সামান্য বলে জানান ওই কর্মকর্তা। হিফুজরের শরীরের কিছু জায়গার চামড়া ছিলে গেছে কেবল। এতে আমাদের ধারণা স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করে ঘটনা অন্যখাতে প্রবাহিত করতে নিজেই নিজের হাত-পা ছিলে দেন তিনি।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সাধারণ ঘুমানোর আগে সবাই হাত পা ধুয়ে ঘুমাতে যান। হিফজুরের স্ত্রী সন্তানদের মরদেহের হাত-পাও পরিষ্কার ছিলো। অথচ তার পায়ে বালি ও কাদা লাগানো ছিলো। এতে বুঝা যাচ্ছে তিনি রাতে ঘুমাননি।

এছাড়া তিনি অজ্ঞান হওয়ার ভান করেছিলেন আদতে অজ্ঞান হননি জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এখন হাসপাতালে জিজ্ঞাসাকবাদেও তিনি উল্টাপাল্টা কথা বলছেন। পাগলের মতো আচরণ করছেন। তার কথাবার্তাও সন্দেহজনক।

তবে কী কারণে হিফজুর তার স্ত্রী সন্তানদের খুন করতে পারেন এ ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেননি ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, যেহেতু হিফজুর এখনও হাসপাতালে আছেন তাই তাকে বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছে না। তবে সুস্থ হলে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদে এ ব্যাপারনে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

সিলেটের গোয়ানঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আহাদ বলেন, কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা হিফজুরকে সন্দেহ করছি। তিনি হাসপাতালে পুলিশের নজরদারিতে আছেন। তবে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি এবং কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানান ওসি।

স্থানীয় লোকজন জানান, বুধবার সকালে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুম থেকে উঠছিলেন না হিফজুরের পরিবারের সদস্যরা। দেরী দেখে প্রতিবেশিরা হিফজুরের ঘরের সামনে যান। এসময় ভেতর থেকে কান্নার শব্দ শুনে দরজায় ধাক্কা দেন তারা।

প্রতিবেশিরা জানান, দরজার সিটকিনি খোলাই ছিলো। ভেতরে প্রবেশ করে খাটের মধ্যে তিন জনের জবাই করা মরদেহ ও হিফজুরকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান তারা। পরে পুলিশে খবর দিলে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ গিয়ে লাশ তিনটি উদ্ধার করেন এবং হিফজুরকে হাসপাতালে পাঠান।

সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, কী কারণে হত্যা করা হয়েছে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে জমিসংক্রান্ত কোনো বিরোধ রয়েছে কী না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনান্য বিষয়গুলোও আমরা খতিয়ে দেখবো। আহত হিফজুরের সাথে কথা বললেও কিছু তথ্য পাওয়া যাবে।

উল্লেখ্য, পেশায় দিনমজুর হিফুজর তার মামার বাড়িতে ঘর বানিয়ে থাকেন। তার বাড়ি পাশ্ববর্তী গ্রামে। হিফজুর যে ঘরে থাকতেন ওই ঘরটি তার মায়ের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত।