হাওরে পর্যটকবাহী নৌচলাচলে যেসব শর্ত মানতে হবে
সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে গত চার বছরে হাউসবোটসহ নানা ধরনের ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল করছে। তবে এসব নৌকা চলাচলে কোনো নীতিমালা নেই। সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে হাউসবোট মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছে জেলা প্রশাসন। সভায় নৌচলাচলে ১৪টি নীতিমালা মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পর্যটকদের জন্যও করা হয়েছে নীতিমালা।
নীতিমালা না মেনে ভ্রমণের কারণে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। হাওরের সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ সংরক্ষণ ও পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবা জরুরি হয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরসহ পর্যটন কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এমন মত দিয়েছেন।
গত রোববার মতবিনিময় সভায় বক্তারা অপরিকল্পিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণ করা, পরিবেশবান্ধব পর্যটনকে উৎসাহিতকরণ ও পর্যটনের কারণে হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রক্রিয়া যাতে ব্যাহত না হয়, তার নিশ্চয়তার বিধানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ওপর গুরুত্ব দেন।
মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার পর্যটন নীতিমালা চূড়ান্তকরণের কাজ হচ্ছে। খসড়া নীতিমালার মধ্যে রয়েছে পর্যটনের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা, তাদের জন্য বিকল্প আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা।
নীতিমালায় আরও রয়েছে রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মাধ্যমে এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা। পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা ও এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন সৃষ্টি করা। যথাযথ কর্তৃপক্ষ নৌচলাচলের অনুমতি ছাড়া কোনো পর্যটকবাহী জলযানকে হাওরে প্রবেশ করতে না দেওয়া। টাঙ্গুয়ার হাওরে ট্যাকেরঘাট এলাকা ছাড়া অন্য এলাকায় নৌযানে রাতযাপন না করা। বিদেশি পর্যটকদের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনীয় আইনানুগ কার্যক্রম নিশ্চিতকরণ ও পর্যটকদের সঙ্গে সমন্বয় করা।
হাওরের জীববৈচিত্র্য সংকটাপন্ন হতে পারে কিংবা জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়তে পারে এমন কোনো কর্মকাণ্ড বা আচরণ থেকে পর্যটকদের বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়।
হাওরের অভ্যন্তরে উচ্চশব্দ সৃষ্টিকারী জেনারেটর বহন থেকে বিরত থাকা, রাত ১০টার পর জলযানে ব্যবহৃত জেনারেটর বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ট্যুর অপারেটর নৌযান মালিক ও পরিচালকদের।
পর্যটকদের জন্য যেসব নীতিমালা করার চিন্তা করা হচ্ছে তা হলো—হাওরে ভ্রমণকালে প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য থেকে পর্যটন সেবার মান যাচাই বা হাওরের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় যাচাই করে নৌযান পরিদর্শনকালে পূর্ণ সহযোগিতা করা।
হাওরে নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত অবস্থানের প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত সময়ের জন্য অনুমতি নেওয়া। কোনোভাবেই তা সর্বোচ্চ নির্ধারিত অতিরিক্ত হবে না।
হাওরে প্রবেশ করার পর জলে বা স্থলে কোনোভাবেই কোনো আবর্জনা না ফেলা, জলযানের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। তাহিরপুর উপজেলার ট্যাকেরঘাট ছাড়া নৌকা কিংবা জলযানে অন্য কোথাও রাতযাপন না করা। শিক্ষাসফরের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে ন্যূনতম একজন শিক্ষক নিযুক্ত রাখা।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ হাওরে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে জানান, শিগগিরই হাওরের পর্যটন এলাকার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ চলে আসবে। এতে করে পর্যটকেরা আরও নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারবেন।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, ‘বর্ষায় হাওরে পানি এলে পর্যটক আসতে শুরু করবে। তাই বর্ষার আগেই আমরা নীতিমালা প্রণয়ন করব। নীতিমালা অনুযায়ী নৌযান মালিক ও পর্যটকদের হাওরে চলাচল করতে হবে।’