২০ লাখ ব্যাটারিচালিত যান গিলে খাচ্ছে বিদ্যুৎ!
রাজধানীর আহাম্মদবাগ এলাকার দারোগার বাড়ির মোড়ের গলিপথে বেশ কয়েকটি ব্যাটারিচালিত রিকশার গ্যারেজ। এ রকম গ্যারেজের কমতি নেই পাশের মহল্লা থেকে শুরু করে মুগদাপাড়া, যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ, বাসাবোসহ খিলগাঁও এলাকায়। সরেজমিন কয়েকটি গ্যারেজে ঘুরে দেখা গেছে, ১০ থেকে ২০টির বেশি রিকশা রাখা হয় প্রতিটিতে। মালিকের জিম্মায় থাকে এসব নিষিদ্ধ যান।
কয়েককটি গ্যারেজ ম্যানেজার জানান, দেড় থেকে দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ব্যাটারি চার্জের জন্য বিদ্যুতের বিশেষ লাইন নামানো হয়েছে। অথচ টাকা তোলার আগেই শোনা যাচ্ছে এসব গ্যারেজ ও রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
মুগদার এক গ্যারেজ ম্যানেজার কামাল বলেন, যদি এসব যানবাহন নিষিদ্ধ হয় তবে কিভাবে উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদন না হলে তো মানুষ কিনতো না। আমাদের ঠেকানোর আগে উৎপাদন ঠেকানো জরুরি বলে মত দেন তিনি। শুধু রাজধানী ঢাকা বলে কথা নয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলজুড়েও এখন ব্যাটারিচালিত রিকশা আর ইজিবাইকের ছড়াছড়ি। রাজপথ থেকে মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ এসব যানবাহন।
অথচ এসব যানের সরকারি অনুমোদন নেই। সড়ক দুর্ঘটনার জন্যও তিন চাকার এসব যানবাহন বিশেষভাবে দায়ি বলছেন যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো।
করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক অভিঘাতের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের ওপর পড়েছে। কয়েক মাস ধরেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্বব্যাপী জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকার একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। পরিকল্পিত লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্তের পর এখন সরকারি সব দপ্তরে বিদ্যুতের ২৫ শতাংশ ব্যবহার কমানো, জ্বালানি খাতের বাজেট বরাদ্দের ২০ শতাংশ কম ব্যবহারের ব্যবস্থা করাসহ নতুন করে আরও আট দফা সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
এই অবস্থায় দেশে বিদ্যুৎচালিত ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইক বন্ধ হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরাসহ যোগাযোগ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারাদেশে কমপক্ষে ২০ লাখ এমন পরিবহন চলছে। যা ২০১৬ সালের ছিল ১০ লাখ। ব্যাটারিচালিত যানবাহনে দিনে বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এসব বন্ধে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রশাসন ও স্থানীয় নেতাদের যোগসাজশে চলছে এসব যান। বুয়েটের এক গবেষণা বলছে, সারা দেশে দিনে অন্তত এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার পেছনে।