৮ মাসেও মেরামত হয়নি 'দুই টাকার' দেবে যাওয়া সেই সেতু
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের উপজেলা সদরের নলজুর নদীর ওপর ডাকবাংলো সড়কের সামনে দুই টাকা করে চাঁদা দিয়ে তৈরি করা সেতুটি দেবে যাওয়ার ৮ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো মেরামত করা হয়নি। ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসি।
এলাকাবাসী, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে নলজুর নদীর ওপর ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় সেতুটির জায়গা নির্ধারণ নিয়ে তৎকালীন জগন্নাথপুর সদর ইউনিয়নের (বর্তমান পৌরসভার) হবিবপুর, জগন্নাথপুর, ইকড়ছই গ্রামের মানুষের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়।
১৯৯২ সালে ব্যবসায়ীদের অর্থে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তৎকালিন সময় সেতুর পাঁচটি পিলার তৈরি করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে স্থানীয় সাংসদ আবদুস সামাদ আজাদ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তিনি এলজিইডিকে সেতুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন। এরপর এলজিইডির তত্ত্বাবধানে সেতুর কাজ শেষ হলে ১৯৯৬ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ সেতুর উদ্বোধন করেন।
সাম্প্রতিককালে নলজুর নদী খননের সময় অপরিকল্পিত খননে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নেশন টেক লিমিটেডের লোকজন সেতুর পিলারের কাছাকাছি খনন করায় সেতুর মাঝখানের দুই পিলার গত ১৭ এপ্রিল দেবে গেলে স্থানীয় প্রশাসন ওই সময় এসেতু দিয়ে সবধরণের চলাচল বন্ধ করে দেয়।
এদিকে সেতুটি চলাচলে অচল হয়ে পড়লে সদরের নলজুর নদীর অপর গুদামের পাশের ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি চলাচলে একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠে। অতিরিক্ত যান চলাচলের চাপে প্রতিদিনই সেতুর দুই পাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এর তীব্রতা শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। যেকারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন জনসাধারণ। এরমধ্যে এ সেতুটি নতুন করে নির্মাণের জন্য শহরের হেলিপ্যাড এলাকায় বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা করা হয়েছে। ফলে নদীর দুইপারের লাখো মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।
জগন্নাথপুর পৌরশহরের ইকড়ছই এলাকার বাসিন্দা মুজিবুর রহমান মুজিব জানান, ডাক বাংলো সেতু ৮ মাস আগ দেবে যাওয়ায় এসেতু দিয়ে সবধরণের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেতুটি সংস্কারে পৌর কর্তৃপক্ষ কিংবা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর আজও কোন পদক্ষেপ নেননি। ফলে আমরা এলাকাবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। তাঁদের উদাসিনতার কারণে কষ্ট পেতে হচ্ছে আমাদের।
জগন্নাথপুর উপজেলা নাগরিক ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক রোমানুল হক রুমেন বলেন, শহরে ডাক বাংলোর সেতুতে অচল হয়ে পড়ায় চাপ বেড়েছে গুদামের সেতুতে। এতে করে প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি হয়ে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। বর্তমানে গুমাদের ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি নতুন করে নির্মাণের প্রস্তুুতি চলছে। ফলে নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পারের সঙ্গে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। ৮ মাসে আগে দেবে যাওয়া সেতুটি যদি মেরামত করা হতো তাহলে কিছুটা দুর্ভোগ লাঘব হতো।
জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র আক্তার হোসেন জানান, সেতুটি চলাচলে উপযোগি করতে একটি প্রকল্পের আওতাভুক্ত করতে প্রক্রিয়া চলছে।
এলজিইডির জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন জানান, সেতুটি দেবে যাওয়া স্থানে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তিনি জানালেন, গুদামের পাশের সেতুর টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ। অচিরেই কাজ শুরু হবে। জনসাধারণের দুর্ভোগ লাগবে বিকল্প সেতুর কাজ চলছে।