এবার ডিএজি এমরান সমর্থকরা কী বলবেন?

এবার ডিএজি এমরান সমর্থকরা কী বলবেন?

বিশেষ প্রতিনিধি

শুক্রবার একদিকে ঘোষণা হয় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে বরখাস্ত এমরান আহমেদ ভূঁইয়া বরখান্ত হয়েছেন আরেকদিকে প্রতিবেদন হয়- তিনি তার পরিবারসহ ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে আশ্রয় চেয়েছেন। যদিও অ্যাম্বাসি থেকে এর কোন সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এমরান আহমেদ ভূইয়া সত:প্রণোদিক হয়ে গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানিয়েছেন। এরপরই প্রশ্ন উঠেছে, গত দুইদিন ধরে ইউনুসের বিবৃতিতে সাক্ষর না করার কারণে যারা তার সততা এবং বাক স্বাধীনতার কথা বলছিলেন তারা এখন কী বলবেন? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে তাদের অনেকেই অবস্থান বদলেছেন। তারা পূর্বের অবস্থান বলদে বলছেন, আমেরিকার আনুকূল্য পাওয়ার জন্য ড. ইউনুসকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন এই ডিএজি।

ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায় এমরান আহমেদ এর ঘটনা মোটেই বিবৃতিতে সাক্ষর না দেওয়া থেকে তৈরী না। বরং ‘কিছু সুবিধা পেতে’ বারবার ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে বিবৃতি বিষয়টাকে তিনি হাইলাইট করতে চেয়েছেন। তিনি একেবারেই সময় না নিয়ে সরকারের পক্ষের অবস্থান থেকে বিরদ্ধ অবস্থানে দাঁড়িয়ে আমেরিকার আশ্রয় চেয়ে বসেছেন। তার সহকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, একদিকে সুপারিশ করে ডিএজি পদ হাতিয়ে নিয়েছেন। আরেকদিকে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে নিজের ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন এমরান।

উল্লেখ্য, শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করা এবং বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গত মাসে খোলা চিঠি দিয়েছেন ১৭৫ জন বিশ্বনেতা। এরপর এ চিঠির বিপক্ষে বেশ কিছু বিবৃতি দেওয়া হয়েছে দেশের ভেতর থেকে। এরকমই একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবেন না বলে সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমকে জানান সরকারের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। একইসঙ্গে তিনি বলেন যে, ড. ইউনূস বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যদিও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় থেকে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে— এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া এমন কথা বললেও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ড. ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এবং এর কোনো প্রমাণও মেলেনি।

এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। এ সময় তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। তিনি ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল হাইকোর্টে প্র্যাক্টিসের অনুমতি পান এবং ২০০৫ সালের ২১ জুলাই সদস্যপদ লাভ করেন। এরপর ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি তিনি অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। বর্তমান সরকারের একজন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনের সুপারিশে তিনি নিয়োগ পান বলেও কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে। কোন পথে সুপারিশ করলে তিনি নিয়োগ পেতে পারেন সেই চেষ্টা অব্যাহত রেখে তিনি আনুগত্য নেওয়ার প্রমাণ মেলে।

কেনো নিজ উদ্যোগে ডিএজি পদ পেতে হয়রান এই ডিএজি হঠাৎ বিগড়ে গেলেন জানতে চাইলে সুপ্রীমকোর্টের একাধিক আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস অর্থাৎ দেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার অফিস থেকে ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি নেওয়ার ষড়যন্ত্র করে আসছিলেন। এ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে ও লোভে পা দিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য তার এসব কর্মকাণ্ড।

অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের তার তিন জন সহকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এমরান বিচারপতি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তদবির করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হয়েছিলেন। কিন্তু পরপর দুই নিয়োগে তিনি বিচারপতি হতে পারেননি। এতে তার মনে ক্ষোভ জন্মেছে। আবার কেউ বলছেন, এমরানের আত্মীয়-স্বজনদের অনেকে আমেরিকায় থাকেন। আমেরিকান ভিসা নিশ্চিত করতেই তিনি ড. ইউনূসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরানের অবস্থান পরিবর্তন নিয়ে ফেসবুক পোস্ট করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কুমার দেবুল দে। ফেসবুক পোস্টের একাংশে তিনি লিখেছেন, ‘একজন ব্যক্তি যদি মনে করে শেখ হাসিনার পক্ষে থেকে বা বাংলাদেশের সঙ্গে থেকে কি সুবিধা বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে বা পাওয়া যাবে তার চেয়ে অধিক সুবিধা যদি ড. ইউনূসের পক্ষে বা আমেরিকার সঙ্গে থেকে পাওয়া যায় তাহলে একজন ব্যক্তি কেন শেখ হাসিনার পক্ষে থাকবেন? কোনো ব্যক্তি যদি দেখেন শেখ হাসিনার পক্ষে থেকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হওয়া গেছে। এরপর বিচারপতি হওয়ার রিপিটেড চেষ্টা করেও আর এগোতে পারেননি। তারপরে হতাশ হয়ে দেশের ওপর ভীতশ্রদ্ধ হয়ে সপরিবারে আমেরিকা চলে যাওয়ার চেষ্টা করে দুইবার ভিসা রিফিউজ হলে সেই ব্যক্তির আর কীইবা করার থাকে! শতভাগ ভিসা কনফার্ম করার মিশন নিয়ে ড. ইউনূস বা আমেরিকার পক্ষ নেওয়া ছাড়া!’