দুই ভোটে হেরে মামলা, আড়াই বছর পর পুনর্গণনায় ৪ ভোটে জয়ী

দুই ভোটে হেরে মামলা, আড়াই বছর পর পুনর্গণনায় ৪ ভোটে জয়ী

সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের প্রায় আড়াই বছর পর মেয়র পদ নিয়ে করা একটি নির্বাচনী মামলার রায়ে পরাজিত প্রার্থী ফারুক আহমদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেট যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত এবং নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আরিফুজ্জামান গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) এই রায় ঘোষণা করেন।

জানা যায়, সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি। ওইদিন ভোট গণনা শেষে মেয়র পদে আব্দুল আহাদকে দুই ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। বিষয়টি তখন মেনে নিতে পারেননি পরাজিত মেয়র প্রার্থী ফারুক আহমদ।

ওই বছরই তিনি সিলেট যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে ৫টি ভোটকেন্দ্রের ব্যালট পেপার পুনরায় গণনা চেয়ে মামলা দায়ের করেন। নির্বাচনী মামলা নং ০৩/২০২১। পরে আদালত বাদী পক্ষের সাক্ষী ও বিবাদী পক্ষের সাক্ষী গ্রহণ করে ভোট পুনরায় গণনার নির্দেশ দেন। গণনায় ফারুক আহমদ ৪ ভোট বেশি পান।

ফলাফলে কারচুপির অভিযোগে করা মামলা দীর্ঘদিন চলার পর উভয়পক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে কয়েক দফায় আদালতে ভোট পুনরায় গণনা করা হয়। এতে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ফারুক আহমদের বৈধ ভোট হয় ২০৭১ আর আব্দুল আহাদের বৈধ ভোট হয় ২০৬৭। বৃহস্পতিবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিজ্ঞ বিচারক রায় ঘোষণা করেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে আদালতের ওয়েবসাইটে রায়ের তথ্য প্রকাশ হয়।

আড়াই বছর পর পুনর্গণনায় ৪ ভোটে জয়
রোগীর থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে হাসপাতালে জমা ৫০
মামলার বাদী ফারুক আহমদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী গোলাম রব্বানী চৌধুরী ও দুর্নীতি দমন ট্রাইব্যুনাল সিলেটের পিপি অ্যাডভোকেট আলী মর্তুজা কিবরিয়া। বিবাদী পক্ষের হয়ে মামলা পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী সামসুল হক।

রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফারুক আহমদের আইনজীবী আলী মর্তুজা কিবরিয়া জানান, নির্বাচনের পরপরই স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আব্দুল আহাদকে ২ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। কিন্তু ফলাফল ঘোষণায় কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট পুনরায় গণনার দাবিতে সিলেট যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন দুই ভোটে পরাজিত হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক আহমদ। বহুল আলোচিত এ মামলা দীর্ঘদিন চলার পর ভোট পুনরায় গণনার আদেশ হয়। কয়েক দফায় গণনা শেষে ফারুক আহমদ ৪ ভোটে বিজয়ী হন। বৃহস্পতিবার মামলার রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে ন্যায়বিচার পেয়েছি।

সদ্য বিজয়ী ফারুক আহমদ বলেন, আদালত যে মানুষের শেষ ভরসা তাই আজ প্রমাণ হলো। রায়ে জনগণের বিজয় হয়েছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আইনি লড়াই করেছিলেন। তিনি তার আইনজীবীগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল আহাদ  বলেন, আদালতের রায় তিনি এখনো পাননি। রোববার আদালতের রায়ের নকল তুলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

তার আইনজীবী শামসুল হক জানান, রায় প্রকাশের বিষয়ে তিনি অবগত নন। আবদুল আহাদের বিরুদ্ধে রায় গেলে তার সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন। প্রয়োজন হলে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

তার আইনজীবী সামসুল হক জানান, রায় প্রকাশের বিষয়ে তিনি অবগত নন। আব্দুল আহাদের বিরুদ্ধে রায় গেলে তিনি পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন। যদি তিনি মনে করেন উচ্চ আদালতে যাবেন তাহলে সেটা তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন।

২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি জকিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আব্দুল আহাদ পান ২০৮৩ ভোট আর ফারুক আহমদ পান ২০৮১ ভোট। এরপর কারচুপির অভিযোগ তুলে জকিগঞ্জ সরকারি কলেজ কেন্দ্র, মধুদত্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়, আইডিয়াল কেজি স্কুল কেছরি, মাইজকান্দি মাদ্রাসা কেন্দ্র ও জকিগঞ্জ গার্লস হাইস্কুল কেন্দ্রের ভোট পুনরায় গণনার জন্য ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছিলেন।