শিক্ষার্থীদের অনশন ভেঙে আলোচনার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনশন ভেঙে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এসময় মন্ত্রী বলেন, আলোচনার উপরে কিছু নেই। যত সমস্যাই থাকুক আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব। শনিবার (২২ জানুয়ারি) নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ক্যাম্পাসে পুলিশি অভিযান দুঃখজনক, তেমনই শিক্ষকদের লাঞ্চিত করাও দুঃখজনক। তিনি বলেন, এ আন্দোলনে অন্য কারো ইন্ধন রয়েছে কি না, অন্য কারো হাত রয়েছে কি না তা আমি জানি না। আপনারা (সাংবাদিকরা) এটি খতিয়ে দেখতে পারেন। তিনি আরো বলেন, আমার সঙ্গে বা আমার পক্ষ থেকে যদি অন্য কাউকে যেতে হয়, আমরা আলোচনায় বসতে রাজি আছি। কথা বলা যাবে না, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
ডা. দীপু মনি বলেন, করোকালীন সময়ে দীর্ঘদিন আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। আমরা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছি। সেখানে অনশন করে আমাদের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে এটি কোনভাবেই আমাদের কাছে ভালো লাগছে না। তাই আমরা চাই এই সংকট সমাধান করতে যেটি আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব।
এর আগে গতকাল শুক্রবার বিকেলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষার্থীদের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন। এসময় শিক্ষামন্ত্রী ঢাকায় গিয়ে আলোচনা করতে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করলে শিক্ষার্থীরাও সম্মত হন। তার কিছু সময় পর পরিবর্তন হয় সিদ্ধান্ত। শিক্ষার্থীরা ঢাকায় গিয়ে কথা বলতে অসম্মতি জানান এবং অনলাইন মাধ্যমে আলোচনার প্রস্থাব দেন।
তবে শিক্ষার্থীরা ঢাকায় না গেলেও সৃষ্ট সমস্যার ব্যাপারে আলোচনা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসেন। তারা গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকায় পৌঁছান। এরপর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে শনিবার তার নিজ বাসভবনে সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় বৈঠক করেন।
অন্যদিকে বৈঠক চলাকালীন সময়েই গণঅনশন কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় প্রেস ব্রিফিং করে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
এর আগে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বিকাল ৩ টায় কাফনে মোড়ানো একতি প্রতীকী লাশ নিয়ে ‘মৌনমিছিল’ করে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে প্রথমে প্রায় ১০ মিনিট নীরব দাঁড়িয়ে থেকে শিক্ষার্থীরা জানান মৌন প্রতিবাদ। এরপর কারো সাথে কোন কথা কিংবা শ্লোগান ছাড়াই ‘মৌনমিছিলটি’ বিশ্ববিদ্যালয়ের চেতনা-৭১ পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে। সেখানে কয়েক মিনিট অবস্থানের পর ফের লাশ বহন করে নিয়ে আসা হয় গুল চত্বরে। সেখানে অন্তত ১০ মিনিট লাশ সামনে রেখে গোল হয়ে বসেন শিক্ষার্থীরা। এর পর শেষ হয় মিছিলটি।
তবে ‘মৌনমিছিল’ চলমান সময়ে কোন শ্লোগান না হলেও শেষে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘চারদিন থেকে ২৪ টি মানুষ অনশন করছে। তাদের জীবন হুমকির মুখে রেখে উপাচার্য এখনো দায়িত্ব আঁকড়ে বসে আছেন। সুতরাং আমরা তার নতুন নাম দিচ্ছি- ‘বিশ্ব বেহায়া দ্যা সেকেন্ড’। এমনকি প্রথম বেহায়াদের মতই তাকেও সরিয়ে দেয়া হবে। যদি সকল শিক্ষার্থী মারা যান তবুও এই নির্লজ্জ উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলন থামবে না।’
এদিকে দীর্ঘ সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনশনে থাকা ২৪ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ১৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। আর হাসপাতাল থেকে কিছুটা সুস্থতা বোধ করলে একজন ফিরেছেন অনশনস্থলে।
অনশনরতদের চিকিৎসা সহায়তার কাজে নিয়জিত চিকিৎসক দলের প্রধান নাজমুল হাসান বলেন, ‘যারা হাসপাতালে ভর্তি তাদের মধ্যে দুজনের শ্বাসকষ্ট থাকায় ন্যাবুলাইজেশন দিতে হচ্ছে। এক জনের অবস্থা খুব খারাপ। সে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি। ওখানকার বিভাগীয় প্রধান জানিয়েছেন মুখে খাবার দিতে না পারলে বিশাল সমস্যা হতে পারে। অপর একজনের অবস্থা খারাপের দিকে। এছাড়াও অনশনস্থলে যারা আছেন তারাও অসুস্থ। এ অবস্থায় থাকলে তাদের শরীর আরও খারাপের দিকে যাবে।’