সারাদেশে দুর্গাপূজার আমেজ, বিপরীত চিত্র ছিল বিএনপি-জামায়াত আমলে
দুর্গাপূজা বর্তমানে উৎসব উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ছিল এই বিপরীত। সেসময় পূজার কয়েটা দিন ভয়ে ভয়ে কাটাতে হতো। এমনকি ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এই দেশে হয়নি কোনো দুর্গাপূজা। সেই দুঃসহ স্মৃতির দিনে আর ফেরত যেতে চান না সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তারা বলছেন, শারদীয় দুর্গাপূজা এখন উৎসবে রূপ নিয়েছে।
এক সময় দেশে নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা করতে পারতেন না সনাতন ধর্মালম্বীরা। ১৯৯১ সালে নির্বাচনের পর নির্মম পাশবিকতার শিকার হয়েছিল ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। শেফালী, পূর্ণিমা, কৃষ্ণা ধর্ষণের কথা এ দেশের সংখ্যালঘুরা ভুলে যায়নি। সেময় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক প্রতিবেদনে বলেছিল, ‘সংখ্যালঘু নির্মূলের এক অন্যায্য কর্মসূচির নীরব বাস্তবায়ন চলছে বাংলাদেশে।’
সেবছর বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় গ্রহণের কদিন পর দুর্গাপূজা শুরু হয়। একটি দৈনিকের শিরোনাম ছিল, ‘সারা দেশে নিরানন্দ পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু’। ২১ অক্টোবর দেশের বিভিন্ন দৈনিকে খবর ছিল, মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডে প্রতিমা ভাঙচুর, চাঁদাবাজি, লুটপাট। বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে শারদীয় দুর্গোৎসব মানেই ছিল প্রতিমা ভাঙচুর, আতঙ্ক। এজন্য বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে কখনই তাদের অনুতাপ জানায়নি।
বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নেতারা বলছেন, বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় সংখ্যালঘু নামে পরিচিতদের বড় ভরসা সরকার বা রাষ্ট্র। কিন্তু বর্তমানে রাষ্ট্র তাদের কথা বললেও আগেকার সরকারগুলো সেভাবে তাদের কথা কেউ শোনেনি। বিএনপি-জামায়াত আমলে একবার শারদীয় দুর্গাপূজা না হবার মতো বেদনাদায়ক ঘটনাও ঘটেছিল দেশে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে এদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজা পালন করতে পারেনি। এমনকি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনের ও নারীদের সম্ভ্রমের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে এদেশের হিন্দুদের পূজা পালনে শতভাগ নিরাপত্তা দিয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বার্তা দিয়েছেন ‘আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মীকে শক্তিশালী প্রহরী হিসাবে প্রতিটি মন্দিরে পাহারা দিতে হবে, যাতে কেউ মন্দিরের কোনো ক্ষতি করতে না পারে।’
প্রতিবারের মতো এবারও পূজা উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে অনুদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটিয়ে একটি মহল ভীতি তৈরি করতে চায়। যদিও বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলায় মহানগর ও আদর্শ সদর উপজেলার ৯১ টি পূজামণ্ডপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার মনে করেন আগের তুলনায় পূজার আনুষ্ঠানিকতা বেড়েছে। তিনি বলেন,‘ এখন সকল সম্প্রদায়ের মানুষ সম্পৃক্ত হয়। এমনকি আগের তুলনায় পুজোর সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিবছর উৎসবকে এগিয়ে নিতে যে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয় সেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কিছু সুবিধা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার, প্রশাসন আন্তরিক এবিষয়ে সন্দেহ নেই। সকালের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা ভালো একটি উৎসব কাটাবো সেই কামনা করি। ‘
শুক্রবার মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে বাঙালি সনাতন ধর্মালম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। ২১ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ২২ অক্টোবর মহাঅষ্টমী, ২৩ অক্টোবর মহানবমী এবং ২৪ অক্টোবর দশমী তিথি প্রতীমা বির্সজনের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হবে এই শারদীয় উৎসব।