সিলেট থেকে ফ্লাইটে সৌদি যাবেন ওমরাহ যাত্রীরা

সিলেট থেকে ফ্লাইটে সৌদি যাবেন ওমরাহ যাত্রীরা

টানা দেড় বছর পর ওমরাহ চালুর অনুমতি দিয়েছে সৌদি সরকার। তবে এবার সিলেট থেকে সরাসরি সৌদি আরবে যেতে পারবেন ওমরাহ যাত্রীরা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই ওমরা যাত্রীরা সিলেটে থেকে সৌদি যেতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, টানা ১৮ মাস পর গেল ১০ আগস্ট মঙ্গলবার হিজরি নববর্ষের প্রথম দিনে পবিত্র ওমরাহ চালু করেছে সৌদি সরকার। দুই ডোজ টিকা গ্রহণকারী সারা বিশ্বের মুসলমানরা সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ করতে যেতে পারবেন। খুলে দেওয়া হয়েছে মসজিদুল হারামের সবগুলো প্রবেশদ্বার। গত ৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার থেকে সবকটি গেট উন্মুক্ত করা হয়েছে। করোনাকালে মসজিদে নববীর মাত্র চারটি গেট খোলা ছিল। সাজানো হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে। মসজিদে নতুন কার্পেটও বিছানো হয়েছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে।

এদিকে, এবার ওমরাহ পালনের জন্যে সিলেটের ১৭টি ট্রাভেল এজেন্সিকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-লতিফ ট্রাভেলস, আল-মনসুর এয়ার সার্ভিস, যাত্রীক ট্রাভেলস, নিউ মডার্ন ট্রাভেলস, এলাইট ট্রাভেলস, আলফা ট্রাভেলস, সিটি ওভারসিজ, ডিসকোভারী সিলেট ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস, মৌরী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সোমা ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিসেস, আল-ইহসান ট্রাভেলস, শিমন ওভারসিজ এক্সপ্রেস, সিপার এয়ার সার্ভিস, আশোক ট্রাভেলস, শিপলু ওভারসিজ, সুরমা ট্রেড এন্ড ট্যুরস, সানশাইন ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস ও মুন ট্রাভেলস।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হজ্জ এজেন্সীজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও সিলেট জোনের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল কবির চৌধুরী শীরু জানান, সিলেট থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিমানের ওমরাহ ফ্লাইট চালু হতে পারে। প্রাথমিকভাবে দেশের ২৪৭টি ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ওমরাহ করানোর অনুমতি দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে সিলেটের ১৭টি ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে। এয়ারলাইন্সের ভাড়া নির্ধারণের পর চলতি মাসের শেষের দিকে এবারের ওমরাহ প্যাকেজ চূড়ান্ত হতে পারে।

হাব’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও সিলেট জোন’র সভাপতি মোতাহার হোসেন বাবুল জানান, সৌদি সরকার ওমরাহ চালুর পাশাপাশি এবছর কিছু শর্তও দিয়েছে। কিন্তু যাত্রী কেমন হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। ট্রাভেলস সমূহে ২৫ আগস্টের পর পুরোদমে ওমরাহ যাত্রীদের কাজ শুরু হয়ে যাবে। যতটুকু জেনেছি, আগামী সপ্তাহে বিমানের ভাড়াও নির্ধারণ হয়ে যাবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিলেট’র মহাব্যবস্থাপক মো. ফারুক আলম জানান, ওমরাহ’র ফ্লাইট ও ভাড়া আমাদের প্রধান কার্যালয় নির্ধারণ করে। এখনো ফ্লাইট ও ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি। যখন নির্ধারণ করা হবে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানিয়ে দেয়া হবে।

জানা গেছে, এবার ১৮ বছরের উপরে সব বয়সীরা ওমরাহ করতে যেতে পারবেন। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১২ বছরের উপরের বাচ্চাকেও তাদের পরিবারের সদস্যরা নিতে পারবেন। “মডার্না, ফাইজার, জনসন ও এস্টোজেনেকা’র দুটি ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন কেবলমাত্র তারাই যেতে পারবেন ওমরাহ পালন করতে। তবে, সিনোফার্মা’র দুটি ডোজ ভ্যাকসিন যারা নিয়েছেন-তাদেরকে দিতে হবে আরও একটি বুস্টার ডোজ।

আপাতত মডার্না, ফাইজার, জনসন ও এস্টোজেনেকা”র দুটি ডোজ গ্রহণকারীরা যেতে পারবেন। পরবর্তীতে সিনোফার্মা ও সিনোভ্যাক’র দুটি ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদেরকেও সৌদি সরকার অনুমতি দিবে বলে হাব সূত্র জানিয়েছে।

জানা গেছে, প্রতিটি রুমে ২ জনের বেশি থাকা যাবে না। একটি বাসে যাত্রী থাকবে ২৫ জন। ৩ বেলা খাবার ও থাকা, ট্রান্সপোর্টসহ এবারের ওমরাহ প্যাকেজের মধ্যে থাকবে। সৌদি এয়ারপোর্টে পৌঁছার পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর ল্যাবে কোভিড-১৯ বা করোনা টেস্ট করা হবে। অ্যাপসের মাধ্যমে ওমরাহ করার সময় নির্ধারণ করে হারাম শরীফ ও মসজিদ নববীতে প্রবেশ করতে হবে। এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশনের জন্যে থাকতে হবে করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট।

ট্রাভেলস সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা মহামারি শুরুর আগে বাংলাদেশ থেকে সর্বনিম্ন ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকাও ওমরাহ করা যেত। ভিআইপি প্যাকেজের মূল্য ছিল আরো বেশী। এয়ারলাইন্সগুলো ওমরাহ ফেয়ার নির্ধারণের পরই এবারের ওমরাহ প্যাকেজ নির্ধারণ করা যাবে বলে জানা গেছে। বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স প্রতি বছর ওমরাহ ফেয়ার ঘোষণা করে। করোনা শুরুর আগ-মুহুর্তে ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ওমরাহ যাত্রীরা বিমানের ফ্লাইটে রওয়ানা হয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত, করোনার কারণে ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বিদেশিদের জন্য পবিত্র ওমরাহ পালন সৌদি সরকার বন্ধ ঘোষণা করে। গত দুই বছর ধরে বিশেষ শর্ত মেনে সীমিত পরিসরে হজ আয়োজন করা হয়। এমনকি বাইরের দেশ থেকে কাউকে হজের জন্য অনুমোদনও দেওয়া হয়নি। চলতি বছর ৬০ হাজার সৌদি নাগরিক ও দেশটিতে অবস্থানরত ১৫০ দেশের প্রবাসীদের হজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।