সিলেট নগর পরিষ্কার করতে ঝাড়ু হাতে শিক্ষার্থীরা

সিলেট নগর পরিষ্কার করতে ঝাড়ু হাতে শিক্ষার্থীরা
ছবি-সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে কয়েক দিন ধরে সিলেট নগরে উত্তেজনা আর পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে রাস্তায় পড়ে ছিল ইটের টুকরা, অর্ধপোড়া কাঠ-টায়ার। সিটি করপোরেশনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের এসব পরিষ্কারের কাজে দেখা যায়নি। তাই যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের খালি প্যাকেটসহ নানা ময়লা-আবর্জনা।
ময়লা-আবর্জনায় ভরা সিলেট নগরের রাস্তা এবার পরিষ্কার করতে ঝাড়ু হাতে নেমেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁরা চৌহাট্টা-নয়াসড়ক এবং চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার সড়কে এ পরিচ্ছন্নতা অভিযান করেছেন। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ছাড়াও নগরের চৌহাট্টা এলাকা ঘিরেই মূলত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসূচি তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে চৌহাট্টা-মীরবক্সটুলা-নয়াসড়ক সড়কের শেষ অংশে নয়জন শিক্ষার্থী রাস্তা পরিষ্কারের কাজ করছেন। কেউ কেউ ময়লা-আবর্জনা কুড়িয়ে কালো ও সাদা রঙের বড় আকারের কিছু বস্তায় ঢোকাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ঝাড়ু দিয়ে রাস্তার ধুলাবালু পরিষ্কার করছেন। সবার হাতেই গ্লাভস, মুখে মাস্ক ছিল। বেলা তিনটা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টা পর্যন্ত টানা কাজ করে তাঁরা প্রায় আধা কিলোমিটারব্যাপী সড়কটি পরিষ্কার করেন।

নয়াসড়ক এলাকায় রাস্তা পরিষ্কারের কাজে নিযুক্ত নয়জনের মধ্যে জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের আবীর, স্কলার্সহোম শাহী ঈদগাহ ক্যাম্পাসের রাহিম আহমদ ফাহাদ, সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজের মিজানুল ইসলাম আদনান এবং শাহপরান কলেজের রেদোয়ান আহমদ রিফাত ছিলেন। তাঁরা সবাই গত বছর উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। তাঁরা জানালেন, রাস্তাগুলো অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা থাকায় দৃষ্টিকটু লাগছে। এ কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁরা রাস্তা পরিষ্কারে নেমেছেন। কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে তাঁরা নগরের কিছু এলাকায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বেলা দুইটা থেকে নগরের চৌহাট্টা এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ছিল। এতে অনেক শিক্ষার্থী অংশ নেওয়ায় যানজটের শঙ্কা ছিল। অথচ রাস্তায় আজ ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি। এ অবস্থায় অনেক শিক্ষার্থী ট্রাফিক পুলিশের মতো যানজট নিরসনে কাজ করছেন। নগরের চৌহাট্টা এলাকার মূল রাস্তায় কর্মসূচি চললেও জরুরি যানবাহন চলাচলের জন্য এক পাশ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। ফলে বড় ধরনের কর্মসূচি শিক্ষার্থীরা পালন করলেও নগরবাসীকে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি।

শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন সিলেটের সমন্বয়ক আবদুল করিম চৌধুরী। তিনিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে নগরে একাধিক কর্মসূচি পালন করেছেন। আবদুল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই প্রজন্মই তো আমরা চাই। তারা দেশকে ভালোবাসবে, দেশের ভালোমন্দ ভাববে, এটাই চাই। নিজেদের তাগিদ থেকেই তারা অপরিচ্ছন্ন রাস্তা পরিষ্কার করতে স্ব-উদ্যোগী হয়ে কাজ করেছে, সেটাকে অবশ্যই আমরা সাধুবাদ জানাই।’ সূত্র: প্রথম আলো