সিলেট মহানগর বিএনপির কমিটিতে ‘আওয়ামীঘেঁষা ব্যক্তি’!

সিলেট মহানগর বিএনপির কমিটিতে ‘আওয়ামীঘেঁষা ব্যক্তি’!

সিলেট মহানগর বিএনপির নবগঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে শুরুতেই নানা বিতর্ক চলছে। ‘আওয়ামীঘেঁষা ব্যক্তি’, সাংগঠনিকভাবে নিষ্ক্রিয় অনেকেই এ কমিটিতে আছেন বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তারা বলছেন, ত্যাগী অনেক নেতাই কমিটিতে ঠাঁই পাননি। এমনকি যারা বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়ে রক্ত ঝরিয়েছেন, তারাও নেই।

স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১০ মার্চ সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক পদে ইমদাদ হোসেন চৌধুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সৈয়দ সাফেক মাহবুব নির্বাচিত হন। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে দেশের বাইরে অবস্থান করায় সভাপতির পদ থেকে নাসিম হোসাইনকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

মহানগর বিএনপির সম্মেলনের প্রায় ২০ মাসের মাথায় ৪ নভেম্বর বিকেলে ১৭০ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হয়। এতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটি গঠনের বিষয়টি জানানো হয়।

পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ২০ জন সহসভাপতি, ১৫ জন সহসাধারণ সম্পাদক এবং ৫ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এ ছাড়া পাঁচজন সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং একজন অর্থ সম্পাদক হয়েছেন। এর বাইরে ১১ জন ‘সম্মানিত সদস্য’ এবং ৪২ জন ‘সদস্য’ হয়েছেন। অন্যরা বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে আছেন।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরপরই বিএনপির একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়। এ অবস্থায় সংগঠনটির একদল নেতা-কর্মী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরের জিন্দাবাজার এলাকা থেকে চৌহাট্টা এলাকা পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা ঘোষিত কমিটি যাচাই–বাছাই করে অযোগ্যদের বাদ দিয়ে সংশোধিত কমিটি ঘোষণার আহ্বান জানান। এ ছাড়া নতুন কমিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও অনেকেই সমালোচনা করে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, ‘আওয়ামীঘেঁষা’ ব্যক্তি ঠাঁই পেলেও দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত, যোগ্য ও ত্যাগী অনেক নেতা কমিটিতে নেই। অথচ এসব নিবেদিতপ্রাণ নেতা ১৭ বছর ধরে দলীয় কর্মসূচিতে ছিলেন। সাংগঠনিকভাবে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিরা কমিটিতে থাকার পাশাপাশি একজনের নাম কমিটির দুটি পদেও অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কমিটিতে একই পরিবারের একাধিক সদস্যও ঠাঁই পেয়েছেন। এ ছাড়া জেলা বিএনপি ও অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের অনেক পদধারী নেতাও ঘোষিত কমিটিতে আছেন। ঠাঁই পেয়েছেন প্রায় এক বছর ধরে কারাগারে থাকা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির সাবেক এক নেতাও।

বিএনপির তৃণমূলের একাধিক নেতা-কর্মী বলেছেন, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখা সত্ত্বেও সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি সালেহ আহমদ খসরু, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ূন আহমদ মাসুক, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব চৌধুরী, সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক রেজাউল করিম নাচন, ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুন ইবনে রাজ্জাক রাসেলসহ গুরুত্বপূর্ণ ১০ থেকে ১৫ জন নেতা ঠাঁই পাননি। অন্যদিকে জেলা বিএনপির কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা তিনজন নেতা মহানগর বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদেও ঠাঁই পেয়েছেন।

মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি সালেহ আহমদ খসরু বলেন, ‘আমার বয়স ৬৪ চলছে। গত ১৭ বছর  সিলেটে মিছিল-মিটিং হয়েছে আর আমি ছিলাম না, এমন নজির নেই। কমিটি কেন্দ্র দিয়েছে, আমার কোনো অভিযোগ, ক্ষোভ নেই। তবে যাঁরা গত ১৭ বছর পুলিশের বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে আন্দোলন করেছে, এমন ব্যক্তিরাও ঠাঁই পায়নি, এটা ভেবে খারাপ লাগছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমি গুলিবিদ্ধ হয়েছি, শরীর থেকে রক্ত ঝরেছে। এ রক্তের প্রতিটি ফোঁটা আমি কমিটিতে না থাকা নেতা-কর্মীদের উৎসর্গ করলাম।’

কমিটিতে ঠাঁই না পাওয়া মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ূন আহমদ বলেন, ‘কমিটিতে ঠাঁই না পেলেও শহীদ জিয়ার বিশ্বস্ত সৈনিক হিসেবে দলের জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করব। কিন্তু আওয়ামীঘেঁষা ব্যক্তি আর নিষ্ক্রিয়রা ঠাঁই পেলেও বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখা বিএনপির নেতাদের কমিটিতে ঠাঁই হয়নি, এটা দুঃখজনক।’

পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের বিষয়ে কথা হয়  সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের বিষয়টি হাই কমান্ড ভাবছে। তবে পর্যায়ক্রমে যোগ্য, ত্যাগী ও পরীক্ষিত সবাই নেতৃত্বে আসবেন।’

‘আওয়ামীঘেঁষা’ ও ‘নিষ্ক্রিয়’ ব্যক্তিদের কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন।