বিএনপির কেন সহিংসতা পছন্দ?
ড. মো. আব্দুল কাইউম || বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলের জন্মই হয়েছিল সহিংসতার পথ ধরে। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বিএনপির গোড়াপত্তন ঘটে।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রধান রাজনৈতিক বেনিফিশিয়ারি বিএনপি। ২০১৩ থেকে ২০১৫, প্রায় দুই বছর লাগাতার চরম সহিংস রাজনীতির পথ অবলম্বন করে বিএনপি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। মাঝখানে বিরতির পর আবারও সহিংস হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক দলটি।
বিএনপির সহিংস রাজনীতিতে ফিরে আসা নিয়ে জনমনে নানামুখী প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি কানাডার একটি ফেডারেল আদালত বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। প্রশ্ন উঠছে, বিএনপির কি সহিংসতার রাজনীতি পরিত্যাগ করতে পারে না?
এক দশক আগে যে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং আগুন সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করেছিল, সেই পথে আবারও এগোচ্ছে বিএনপি। আর তা করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আবারও গাটছড়া বেধেছে বিএনপি। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নামে রক্তাক্ত সহিংসতা শুরু করেছে তারা।
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি সমাবেশের দিন ব্যাপক সহিংসতায় এক পুলিশ সদস্যসহ দুই জন নিহত হয়। বিএনপির ডাকে ২৯ অক্টোবর সারাদেশে হরতাল পালিত হয়েছে। এই হরতালের সময় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাসহ মোট তিন জন নিহত হয়েছে।
তিন দিনের সর্বাত্মক অবরোধ শেষে আবারও ৫ ও ৬ নভেম্বর দেশব্যাপী অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ ছেড়ে আবারও আগুন-সন্ত্রাসের পথে বিএনপি, যা জাতির জন্য মঙ্গলকর কিছু বয়ে আনতে পারে না।
বিএনপিকে যখন নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে না বলে ঘোষণা করা হয়েছিল, ঠিক সেই সময় বিএনপির অনড় অবস্থান দেখে শঙ্কা তৈরি হয়েছিলে যে, বিএনপি এবার সহিংস রূপে আবার ফিরে আসবে। আর এই অপতৎপরতায় নেপথ্যে থেকে সহায়তা দেবে জামায়াত।
নয়াপল্টনে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর অবরোধ কর্মসূচির নামে আবারো জ্বালাও পোড়াও ও আগুন সন্ত্রাসের ঘটনায় আবার প্রমাণ হয়েছে বিএনপি মুখে যতোই না করুক না কেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিলো এবং আছে।
ডিএমপির নিষেধাজ্ঞার পরও জামায়াত শাপলা চত্বরে সমাবেশের চেষ্টা করে এবং সেদিনের সংঘর্ষে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতের কর্মীদেরও দেখা গেছে।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, বিগত কিছুদিন ধরে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির নতুন করে সম্পর্ক হয়েছে।
জামায়াত বিএনপির সাথে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা শুরু করেছে। জামায়াত শাপলা চত্বর এলাকায় সমাবেশ ডেকেছিলো। কিন্তু জামায়াত যেহেতু নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নয়, সে জন্য শাপলা চত্বর এলাকায় সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সেখানে কঠোর অবস্থানের কারণে জামায়াত শেষ পর্যন্ত আরামবাগ এলাকায় অবস্থান নেয়।
বিএনপির প্রধান মিত্র জামায়াত শাপলা চত্বরে সমাবেশ করতে না পারায় ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য বিএনপি চেষ্টা করে।
প্রকৃতপক্ষে জামায়াত কোনদিনই বিএনপিকে ছেড়ে যায়নি। আর বিএনপি কৌশল হিসেবে জামায়াত বিচ্ছিন্নতা প্রমাণ করতে চেয়েছে। বাইরে যাই দেখাক না কেন, তারা বিচ্চিন্ন হবার নয়; তাদের জন্মই হয়েছে সন্ত্রাস-সহিংসা-অগ্নিসংযোগ তথা দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড করতে।
বিএনপি ঢাকা অবরোধের নামে যে রকম তাণ্ডব চালিয়েছে, তাতে মানুষ বুঝেছে সহিংসতার ছাড়া বিএনপির আর কোনো অবলম্বন নেই। প্রশ্ন উঠেছে অবরোধের নামে জনমানুষের চলাচলে বাধা সৃষ্টি, যানচলাচল বন্ধ এবং সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা কি বৈধ রাজনৈতিক কর্মসূচি?
শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তো নেতাকর্মীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে বের হওয়ার কথা নয়। শত শত বিএনপির নেতাকর্মী বড় বড় লাঠি দিয়ে সম্মিলিতভাবে পুলিশের গাড়ির ওপর আঘাত করেছেন।
পুলিশ সেটি ঠেকাতে গেলে পুলিশের ওপরও তারা আক্রমণ করেছেন। কয়েকটি বাস ও গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। বিএনপি ভালো করে জানে এ রকম সহিংস জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতির মাধ্যমে তারা কিছু অর্জন করতে পারবে না।
এক দশক আগে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে প্রায় ৯০ দিন লাগাতার অবরোধের নামে ভয়াবহ জ্বালাও-পোড়াও চালিয়ে, ঘুমন্ত মানুষ নিয়ে চলমান রাতের বাসে আগুন, রেলে আগুন, ফুটপাতের দোকানে আগুন অর্থাৎ সব রকম ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েও তারা কিছু অর্জন করতে পারেনি, বরং রাজনৈতিকভাবে আরো পিছিয়ে পড়েছে। তখন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যা পারেনি, নেতৃত্বহীন বিএনপি সেটি আজ পারবে—এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই।
বিএনপির সহিংস রাজনীতির বলি হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। দেশের জগগণের জন্য রাজনীতি করলে কোন দলের পক্ষে এমন সহিংস রাজনীতির পথ বেছে নেওয়া সম্ভব নয়। হরতাল-অবরোধের নামে জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা আর অগ্নিসন্ত্রাস করে বিএনপি-জামায়াত জোট কার্যত দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চায়।
বিএনপির আসল উদ্দেশ্য আগুনসন্ত্রাস-সহিংসতা-নাশকতা-অন্তর্ঘাতের পথে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করে জাতীয় নির্বাচন বানচাল করা এবং অসাংবিধানিক সরকার আনা।
বিএনপি-জামায়াত সম্মিলিতভাবে যে ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপ করার চেষ্টা করছে জনগণ তা সহজে মেনে নেবে না, সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করে আগুন-সন্ত্রাস-সহিংসতা রুখে দেবে।
ড. মো. আব্দুল কাইউম, সহযোগী অধ্যাপক, মার্কেটিং বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়