সিলেট- সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা
ডুবছে শিক্ষাঙ্গন, তবুও এসএসসি পরীক্ষা নিতে মরিয়া কর্তৃপক্ষ!
মো. মুন্না মিয়া || সময় যতো যাচ্ছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার পানি ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। এক এক করে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সারাদেশের ন্যায় বন্যাকবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা রোববার অনুষ্ঠিত হবে। তবে বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের অধিকাংশ রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডুবে গেছে।
এরইমধ্যে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষার পরীক্ষাকেন্দ্রও ডুবে গেছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের সুযোগও নেই বললে চলে। পাশাপাশি বসতঘরে পানি ডুকায় পরীক্ষার প্রস্তুতি বিঘ্নিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও যথাসময়ে পরীক্ষা নিতে মরিয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে এ পরিস্থিতিতে পরীক্ষা স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকেরা।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) বিকেলে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত ‘জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি’র জরুরি সভা শেষে সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, শুধু কোম্পানীগঞ্জে কয়েকটি কেন্দ্রে পানি প্রবেশের খবর আমরা পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের আমরা নির্দেশ দিয়েছি- অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। আমরা সিলেটে এসএসসি পরীক্ষা যথাসময়ে নিতে চাচ্ছি।’
সুনামগঞ্জের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন। তিনি জানান, ‘বন্যার পানিতে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-দিঘলী এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। সেখান দিয়ে কোনো দূরপাল্লার গাড়ি আপাতত যেতে পারবে না। তবে ছোট যানবাহন, মোটরসাইকেল চলতে পারবে।’
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় দফায় আবার গত বুধবার থেকে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুটি জেলার অন্তত ১ সহস্রাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার নির্ধারিত অসংখ্য কেন্দ্রেও পানি ঢুকে পড়েছে।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীন থাকা চার জেলায় এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৭৩ জন। এর মধ্যে বন্যাকবলিত জেলা সিলেটে ৪৩ হাজার ৮৪৪ জন ও সুনামগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫২ জন পরীক্ষার্থী রয়েছেন। ৪ জেলায় ১৪৯টি পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে ৫৯টি ও সুনামগঞ্জে ৩৩টি পরীক্ষাকেন্দ্র আছে। তবে বন্যা পরিস্থিতিতে কী পরিমাণ পরীক্ষাকেন্দ্র প্লাবিত হয়েছে কিংবা কতসংখ্যক পরীক্ষার্থী পানিবন্দী আছে, এ রকম কোনো পরিসংখ্যান শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানাতে পারেনি।
বানভাসি এলাকার মানুষজন জানিয়েছেন, যেসব এলাকায় পানি উঠেছে, সেখানে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ এসএসসি পরীক্ষার্থী পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কদমতলি এলাকার বাসিন্দা এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী মিজান আহমদ জানান, তাদের বাসায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হাঁটুপানি। অন্যান্য আসবাপত্রের সঙ্গে অনেক বইপত্রও ভিজে গেছে। ঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন তারা। ফলে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে তিনি বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, উপজেলার সবচেয়ে বড় পরীক্ষাকেন্দ্র থানা সদর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে এখন হাঁটুপানি। এ ছাড়া উপজেলায় যে কয়টি পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে, সব কটিতে পানি উঠেছে। উপজেলার ৯০ শতাংশ বাড়িঘরে পানি। এ অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। শিক্ষার্থীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে পরীক্ষা পেছানো উচিত।
অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সিলেট সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে সিলেটে বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে এর মাত্রা আরও বাড়তে পারে।
সিলেট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. ওয়াদুদ জানান, এ পর্যন্ত জেলার ১৬৮ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা পানিতে তলিয়ে গেছে। এগুলোতে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। গোয়াইনঘাটে ৪৮ ও কোম্পানীগঞ্জে ২৬ প্রতিষ্ঠানের সবগুলোতেই পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কানাইঘাটে ৩৭টি, জৈন্তাপুরে ১২টি, বিশ্বনাথে ১৩টি, সিলেট সদরে ১৯টি ও জকিগঞ্জে ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল বলেন, ‘বন্যার পানিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের ৯টি উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। বন্যার এই চিত্র আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। এসএসসি পরীক্ষার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ই সিদ্ধান্ত নেবে।’