চা বাগানে ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য

চা বাগানে ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য

দৈনিক মজুরি ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১৭০ টাকা করার পর মৌলভীবাজার জেলার সবকটি চা বাগানে সোমবার (২৯ আগস্ট) সকাল থেকে দলে দলে শতভাগ শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়েছেন।

রবিবার কাজ শুরু হলেও সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অনেক বৃক্ষরোপণকর্মী যোগ দেননি। শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালীঘাট, ফুলছড়া ও সাতগাঁওয়ের চা শ্রমিকেরা সকাল ৮টা থেকে দলে দলে কাজে যোগ দেন।

ফুলছড়া চা বাগানের শ্রমিক সরদার নারায়ণ ভক্তি বলেন, “আমরা সোমবার কাজ শুরু করেছি। আমরা সবাই আমাদের নতুন মজুরি ১৭০ টাকায় খুশি। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একমাত্র জিনিস চাই নৈমিত্তিক কর্মীদের জন্যও একই পরিমাণ মজুরি পাওয়া যায়।”

ফুলছড়া সেকশনের অন্য চা শ্রমিকরা বলেন, “বাড়িতে খাবার না থাকায় গত ১৯ দিন তাদের জন্য কঠিন ছিল। শিশুরাও কষ্ট পেয়েছে, কারণ তারা দিনে মাত্র একবার ভাত পেতে পারত।”

পলি কুর্মি নামে আরেক কর্মী বলেন, আমি সোমবার কাজে যোগ দিয়েছি। চা পাতাগুলো শক্ত হয়ে গেছে, এখন সেগুলো বাছাই করা কঠিন। গত ১৯ দিনে অনেক চা পাতা নষ্ট হওয়ায় তার খারাপ লাগছে।

পলি কুর্মি বলেন, আমি কাজে যোগ দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু অন্য সব কর্মীরা প্রতিবাদ করায় একা যোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।

কালীঘাট চা বাগানের সভাপতি আভান তাতি বলেন, “সকল দৈনিক ও স্থায়ী শ্রমিকরা আজ (সোমবার) কাজে যোগ দিয়েছেন। তারা নতুন মজুরিতে খুশি, এজন্যে তাদের চা বাগানে গান গাইতে ও নাচতে দেখা গেছে।”

একই মজুরি চায় দৈনিক চা উত্তোলনকারীরা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চা শ্রমিকদের জন্যে দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেছেন। এটি স্থায়ী শ্রমিকদের জন্যে হলেও দৈনিক মজুরিতে কাজ করা শ্রমিকরা আগের মতোই মজুরি পাচ্ছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, “চুক্তিতে উল্লেখ আছে স্থায়ী ও নৈমিত্তিক উভয় ধরনের শ্রমিকই ১৭০ টাকা মজুরি পাবেন। এখন মালিকদের উপর নির্ভর করছে তারা কত টাকা দেবে।”

সোমবার বেশ কয়েকজন দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করা চা শ্রমিক  বলেন, বিক্ষোভ চলাকালীন গত ১৯ দিনে তারা খাবারের ব্যবস্থা করতে না পারায় অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন। শ্রমিকরা জানান, তারা স্থায়ী চা বাছাইকারীদের সমান মজুরি চান। 

শনিবার সন্ধ্যায় দেশে আন্দোলনরত চা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নির্ধারিত নতুন দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা গ্রহণ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, আমরা যা চেয়েছিলাম তাই পেয়েছি।

মৌলভীবাজারের ৯২টিসহ দেশের ১৬৭টি চা বাগানের শ্রমিকরা তাদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা দেওয়ার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট করেন।

দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা দাবিতে গত ৯ আগস্ট দেশের ২৪১টি চা বাগানের শ্রমিকরা দুই ঘণ্টা কাজ থেকে বিরত থাকলে আন্দোলন শুরু হয়।  দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা ১৩ আগস্ট থেকে পূর্ণাঙ্গ ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেন।