জৈন্তাপুরে দুই মাসে ৯০ লক্ষ টাকা মূল্যের ভারতীয় পণ্য জব্দ
গত দুই মাসে দেশের সীমান্ত এলাকা সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ভারতীয় চোরাই ৬৪৯ বস্তা চিনি, গরু-মহিষ সহ অবৈধ বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করেছে জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশ।জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম (পিপিএম) এ তথ্য জানান নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, জৈন্তাপুর সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচালান ব্যবসা বন্ধে পুলিশের পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের আরও শক্ত ভূমিকা পালন করতে হবে। পুলিশ সহ আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অবৈধ ভাবে ভারতীয় চিনি আসা বন্ধ এবং এই ব্যবসার সাথে জড়িত চোরাকারবারিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। চোরাচালান বিরোধী পুলিশের অভিযান চলমান থাকায় সীমান্তে চোরাকারবার ব্যবসা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে তিনি দাবী করেন।
তিনি জানান, সীমান্ত চোরাচালান ব্যবসা বন্ধ ও প্রতিরোধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি সহ সমাজের সচেতন মহলের সহযোগিতা প্রয়োজন। চোরাচালান ব্যবসার সাথে জড়িতদের বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করতে উপজেলার সচেতন নাগরিক সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানান।
তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে জব্দ চোরাচালান পণ্যের মধ্যে রয়েছে ইয়াবা ৭৩ পিস, গরু ২৬টি, মহিষ ১২টি, চা পাতা ৪০ বস্তা, মদ ১২ বোতল, ভারতীয় নিষিদ্ধ সিরাপ ১৬ বোতল, ভারতীয় শাড়ী ১৩০ পিস, লেহেঙ্গা ৫০পিস এবং ভারতীয় নাছির বিড়ি ১৩ লক্ষ ৪৪ হাজার শলাকা, ভারতীয় চোরাই চিনি ৬৪৯ বস্তা উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানে নৌকা ট্রাক গাড়ি সহ অনেক যানবাহন আটক বা জব্দ করা হয়েছে । এসব ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইন সহ নিয়মিত ২৪টি মামলা দায়ের করা হয় এবং ১৮ জন অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সীমান্তে চোরাচালান ও মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখছেন।
গত দুই মাসে চোরাচালান বিরোধী অভিযানে অন্তত ৮০ থেকে ৯০ লক্ষ টাকা মূল্যের ভারতীয় এসব পণ্য জব্দ করা হয়েছে বলে জৈন্তাপুর মডেল থানার সাব-ইন্সপ্রেক্টর শাহীদ মিয়া জানিয়েছেন।স্থানীয়রা জানায়, পুলিশের অভিযানে রাস্তা ঘাটে বেপরোয়া গতিতে ভারতীয় চোরাই পণ্য পরিবহন কাজে ডিআই ট্রাক পিকআপ-সিএনজির কিছুটা গতিরোধ চেষ্টার ফলে হাট বাজার গুলোতে ভারতীয় চিনির মজুদ এবং সরবরাহ অনেকটা কম রয়েছে বলে স্থানীয় জনসাধারণ মনে করছেন।
চলিত বছরে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দেশের বাজারে চিনির মূল্য বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে ভারতীয় চিনি সহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের চাহিদা থাকায় অবৈধ পথে জৈন্তাপুর সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করে আসছে। জেলা ও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সীমান্তে চোরাচালান ব্যবসা বন্ধে বিজিবি পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশ, বিজিবি সহ সরকারের বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানে সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান ব্যবসা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
তবে পুলিশের এসব অভিযানের পর এখনও জৈন্তাপুর সীমান্তের চারিকাটা থেকে নলজুড়ী পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন ভাবে ভারতীয় গরু-মহিষ, চিনি সহ নানা পণ্য অবৈধ পথে বাংলাদেশ প্রবেশ করছে।
সীমান্ত জনপদের বাসিন্দারা জানান, অতীতের চেয়ে বিগত কয়েক মাস থেকে চোরাচালান ব্যবসা বন্ধ করতে জৈন্তাপুর থানা পুলিশ ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে তাদের চোরাচালান বিরোধী অভিযানের তৎপরতা অনেকটা বৃদ্ধি করেছেন।
গত পহেলা সেপ্টেম্বর জৈন্তাপুর প্রেসক্লাব ও কর্মরত প্রিন্ট-ইলেক্টনিক মিডিয়ার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সাথে নবাগত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: তাজুল ইসলাম (পিপিএম)'র মতবিনিময় সভায় উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাদক ও সীমান্তে চোরাচালান ব্যবসা বন্ধে তিনি শক্ত ভূমিকা পালনের অঙ্গিকার করেন।