সুনামগঞ্জ

তৃণমূল আ. লীগের ক্ষোভ শুনে যা বললের কেন্দ্রীয় নেতারা

তৃণমূল আ. লীগের ক্ষোভ শুনে যা বললের কেন্দ্রীয় নেতারা

সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পেয়ে দলের তৃণমূলের নেতারা তাদের দীর্ঘদিনের হতাশা ও ক্ষোভের কথা শুনিয়েছেন। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন–বাণিজ্য ও দলের ভরাডুবি, সাংসদদের সঙ্গে দলীয় নেতাদের দূরত্ব, দলীয় কোন্দল, জামায়াত-বিএনপির লোকজনকে দলে ভেড়ানো, দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করা—এমন অনেক অভিযোগ জানান তারা।

রোববার অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় এসব অভিযোগ করেন তৃণমূল নেতারা।

জবাবে কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাই আওয়ামী লীগের প্রাণ। তারা দলকে শক্তিশালী করেছেন। পঁচাত্তরের পর যখন আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র চলছিল, তখন তারাই দলকে রক্ষা করেছেন। তাই মাঠের নেতা–কর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাছন রাজা মিলনায়তনে বেলা ১১টায় এ প্রতিনিধি সভা শুরু হয়। এতে জেলার ১২টি উপজেলা, ৪টি পৌরসভা এবং ৮৮টি ইউনিয়নের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত একটানা সভা চলে। প্রথমেই ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্য শোনেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবিরের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদ। প্রধান বক্তা ছিলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ।

বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুল সামাদ আজাদ, সুনামগঞ্জ -৫ আসনের সাংসদ মুহিবুর রহমান, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন, সুনামগঞ্জ ও সিলেট সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ শামীমা আক্তার খানম।

আরও বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নূরুল হুদা, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, প্রবীণ নেতা ইদ্রিস আলী, ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিন চৌধুরী, দলের সদর উপজেলার সভাপতি আবুল কালাম, সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন, শান্তিগঞ্জ উপজেলার সভাপতি আবদুল হেকিম, জগন্নাথপুর উপজেলার সভাপতি আকমল হোসেন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সভাপতি বেনজির আহমদ, ধর্মপাশা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিস, তাহিরপুর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক অমল কর, জামালগঞ্জ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক এম নবী হুসেন, ছাতক উপজেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন, ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা নুরে আলম, হুসেন আহমদ প্রমুখ।

সভায় সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তৃণমূলের মতামতকে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মূল্যায়ন করেননি অভিযোগ করে তারা বলেন, এ কারণে অনেক জনপ্রিয় নেতা মনোনয়ন পাননি। এতে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। বর্তমান জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বকে দুর্বল আখ্যায়িত করে আগামী দিনে যোগ্য নেতৃত্ব দেখে দায়িত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান জেলা কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নুরুল হুদা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ যত বড় অর্জন—সবকিছুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ছিল। তাই আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করতে সবাইকে কাজ করতে হবে।

সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে গর্ব করি। আওয়ামী লীগ করা আমার স্বপ্ন ছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছেন। তাঁর প্রতি আনুগত্য ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশের জন্য কাজ করছি।’

নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, দুই বছর সময় আছে। সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে হবে। চায়ের দোকানে বসে নিজেদের সমালোচনা না করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরুন।

সভায় আগামী মে মাসে সুনামগঞ্জের সব উপজেলা ও পৌরসভার সম্মেলন শেষ করে জুন মাসে জেলা সম্মেলন করার ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি।