নবীগঞ্জে বহুরুপী প্রতারক মনি কারাগারে

নবীগঞ্জে বহুরুপী প্রতারক মনি কারাগারে
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার আসামী নবীগঞ্জের বহুরুপী নারী ফরজুন আক্তার মনি (৪০)কে জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
বুধবার সকালে সিলেটের সাইবার আদালতের বিচারক আবুল কাশেম সরকার জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।  এরআগে গত (১০ সেপ্টেম্বর) ফরজুন আক্তার মনির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
কথিত ফরজুন আক্তার মনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে বিভিন্ন সময় নানা ভুয়া পরিচয় দিয়ে সাংবাদিক জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের মানহানী করে আসছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের নানা অপ-প্রচার ও অনেক প্রতারণার অভিযোগে সাংবাদিক এম এ আহমদ আজাদের মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন মনি। জামিনে এসে ফের নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন মনি নামের এই প্রতারক নারী। সে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় হাইকোটের জামিনে এসে সেই ঐ মামলার জামিনের শর্ত ভঙ্গ করে ফেসবুকে পোষ্ট ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়। মামলার বাদী ও স্বাক্ষীদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে নানা রকম কটুক্তি করে।
কে এই মনি?  
মনির দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে সিআইডির এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়। বহু রূপের অধিকারী মনি বিশেষ করে নিজেকে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আত্মীয় এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের মেয়ে আবার অনেককে ভাতিজি পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতো। নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সিনিয়র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে মানহানীকর মিথ্যা স্ট্যাটাস এবং বিভিন্ন ভূয়া একাউন্ট খোলে প্রতারণা করে আসছিল।
অভিযোগ উঠে- প্রতি রাতেই নারীদের বিভিন্ন অশালীন ম্যাসেজ দিতো মনি। তার টার্গেট ছিল- নারী জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন দপ্তরের নারী কর্মকর্তা ও স্কুল-কলেজের ছাত্রী। এদেরকে ম্যাসেজ দিয়ে ব্ল্যাক-মেইল করতো। এসব ম্যাসেজের স্ক্রীণশর্ট প্রকাশ হওয়ায় মনি নারী না পুরুষ এনিয়েও প্রশ্ন উঠে। প্রতারক মনির এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই মনি তার ফেইসবুক আইডিতে বিভিন্ন রকম হুমকি ধামকিমূলক ও মানহানীকর স্ট্যাটাস পোস্ট দিয়ে অপদস্ত করতো। ওই নারী দীর্ঘদিন যাবত নিজেকে সাংবাদিক ও মানবাধীকার কর্মী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনের সাথে প্রতারণা করে আসছিল।
এমনকি তার অপকর্মের প্রতিবাদ করায় সাংবাদিক এম এ আহমদ আজাদ ও এম মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ও আদালতে মামলা দায়ের করে। এর পর প্রায় ৬-৭ মাস পূর্বে নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সমকাল প্রতিনিধি এম এ আহমদ আজাদ ও সাংবাদিক এম মুজিবুর রহমান এর বিরুদ্ধে তার ফেইসবুক আইডিতে একাধিক মানহানীকর স্ট্যাটাস দিলে সাংবাদিক আজাদ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও তথ্য প্রযুক্তি আইনে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, প্রতারক ফরজুন আক্তার মনি পুরুষ সেজে নবীগঞ্জের উপজেলার নারী জনপ্রতিনিধি ও সাবেক মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন নারী ইউপি সদস্যসহ আরও অনেককে অশ্লীল ম্যাসেজ পাঠিয়ে যৌন হয়রানি করে আসছিল। সে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অনেকের সাথে সংখ্যতা গড়ে তোলে। পরবর্তীতে তাদেরকে যৌন হয়রানী করতো। বিশেষ করে প্রবাসীদের বিভিন্ন ম্যাসেজ দিয়ে নানান উপহার সামগ্রী হাতিয়ে নিতো। অনেকেই জানান- ফরজুন আক্তার মনি বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করে প্রতারণা করতো এবং এমন কী ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতা ও প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করছিল। দাদন ব্যবসার সাথে জড়িত থাকারও তথ্য রয়েছে।
এর ফলে অল্প সময়ে সে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যায়। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে পুলিশ শহরতলীর জে.কে উচ্চ বিদ্যালয় পয়েন্ট থেকে নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা ও তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় আলোচিত নারী মনিকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে ২টি এনআইডি কার্ড, বেশ কিছু ভূয়া আইডি কার্ড, ৩টি মোবাইল ফোন,৫টি সিম কার্ড, একটি কলম ক্যামেরাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়াও তার মোবাইলে লগইন করা একাধীক ভূয়া ফেসবুক আইডি এবং শতাধিক পর্নো ভিডিও উদ্ধার করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই সমীরণ দাশ। তাকে গ্রেফতারের পর নবীগঞ্জ উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য গাজী মোঃ শাহনওয়াজ মিলাদ, উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম এর উপস্থিতিতে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম বহুরূপী ফারজানা আক্তার ফরজুন ওরফে মনির বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব উপস্থাপন করলে, মনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সর্ব সম্মতিতে সিন্ধান্ত গৃহিত হয় এবং প্রতারক মনি কর্তৃক নবীগঞ্জের সিনিয়র সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকের মাধ্যমে মানহানিকর স্ট্যাটাস দেয়ার জন্য নিন্দা প্রস্তাব গৃহিত হয়। ওই সময় এক জনপ্রতিনিধি প্রশ্ন তুলেন মনি নারী না পুরুষ? এরপর তার লিঙ্গ পরীক্ষা করার জন্য থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। বিতর্কিত এই মনি নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউপির কায়স্থগ্রামের জহুর উদ্দিনের মেয়ে।