বিএনপির পৈশাচিকতা চিত্র ঢাকার রাস্তায় রাস্তায়, স্তম্ভিত জনতা
বিশেষ প্রতিনিধি ||
হঠাৎই রাজধানীর মৎস ভবনের রাস্তাটি যেনো সাক্ষ্য দিচ্ছে- এইদেশের সাধারণ মানুষকে বার বার ক্ষতবিক্ষত করেছে, ভয়ঙ্করভাবে নির্যাতন করেছে বিএনপি জামায়াত গোষ্ঠী। রাস্তাটা পার হতে গিয়ে হঠাৎ চোখের সামনে হুমড়ি খেয়ে যেনো পড়বে গলে যাওয়া মগজ, ফেসে যাওয়া পেট, পুড়ে যাওয়া শরীরের ছবি। মনে পড়ে যাবে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করায় গোপাল কৃষ্ণ মুহুরির মাথার অর্ধেক মগজ বের হয়ে আসতে চাইছে।
বাংলাদেশজুড়ে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে জামায়াত বিএনপির যে পৈশাচিকতা তার সাক্ষ্য বহন করছে কিছু বিলবোর্ড। মানচিত্রজুড়ে নির্যাতনের নানা সাক্ষ্য বহন করে চলেছে যেনো। রবিবার অফিসের পথে বের হওয়া মানুষ যেনো ফিরে যায় সেই নির্মম সময়ে।
রাজধানীর শাহবাগ, মৎসভবন, আগারগাও এর ব্যস্ত রাস্তায় আটকে যায় চোখ। বাংলাদেশে এমন দিন ফিরে আসুক তা আর চায় না কেউ। ২০ বছর আগের সহিংসতা যেনো তাজা হয়ে ওঠে স্মৃতিতে। কেবল আওয়ামীলীগ সমর্থন করার কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে হাজারো মানুষ, চলেছে অবাধে সংখ্যালঘু নির্যাতন, ধর্ষণ।
শাহবাগের মতো ব্যস্ততম রাস্তাতে চলার পথে একটু দাঁড়িয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে কাউকে কাউকে। একবার তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে চলে যান কেউ কেউ। চোখ ফিরিয়ে নিলেন কেনো জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হান বলেন, এই সহিংসতার চিত্র মনে গেঁথে আছে। তখন আমি বেশ ছোট। আমার এলাকাতে অনেক অত্যাচার নির্যাতনের নজির আছে। আমার প্রতিবেশিরা আমাদের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলো আগুন থেকে বাঁচতে। এসব আমরা ভুলে গেছি। নিজের কাছেই লজ্জা লাগলো এই ছবিটা দেখে। তবে মানুষকে দেখানো দরকার আছে বলেও তিনি মনে করেন।
মৎসভবন থেকে শাহবাগ হয়ে টিএসসি এই পথে যারা যাতায়াত করেন তাদের বড় অংশ শিক্ষার্থী, যারা সেইসময় খুব ছোট ছিলো। ২০০১ এর অক্টোবরের সেই তান্ডব বা পুরো শাসনামলেই যে ভয়ঙ্গর ভীতি তৈরী করা হয়েছিলো সেসব তাদের স্মৃতিতে নেই। বিলবোর্ড দেখে তাদেরই কেউ কেউ কথা বলছিলেন মধুর ক্যান্টিনে বসে। কারা এটি করছে সেটি জানার আগ্রহ যেমন ছিলো অনেকের। তবে এটাও তারা বলছিলেন এসব মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া দরকার আছে। তারা সেইসব দিনগুলোর কথা আরও বিস্তারিত জানতে চায়।
আঁগারগাওতে কথা হয় মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে। মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, এই যে মেট্রোরেলের স্থাপনা এর নিচে এই জঘন্য পোস্টারের মধ্য দিয়ে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়েছে, এই উন্নয়ন আমাদের চোখে পড়ে না, কিন্তু সেই যে জঘন্য দিনগুলো আমরা কাটিয়েছি, তা আমরা ভুলতে বসেছি। আমি কিছুক্ষণ পোস্টারটার দিতে তাকিয়ে আর পারিনি। কান্নায় চোখ ভিজে এসেছে।
প্রতিবারই জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির হাত ধরে প্রকাশ্যে নাশকতা শুরু করে জামায়াত-শিবির। বিএনপি-ছাত্রদল-যুবদল প্রথমে সরকারবিরোধী অবস্থানের নামে দেশজুড়ে সন্ত্রাস শুরু করে, এরপরেই জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চালাতে থাকে। এ যেনো নিয়মে পরিণত হয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় তাদের নিপীড়নের এই ধারা ২০১৪ সালে পেট্রোল বোমায় গণহারে মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো বর্বরতায় রূপ নেয়।
২০০১ সালের ১ অক্টোবরের সাধারণ নির্বাচনের পর বরিশালের আগলঝরা, ময়মনসিংহ, বাগেরহাট, ভোলা, গোপালগঞ্জসহ দেশের অনেকস্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়। এই নির্যাতন-জুলুম মহোৎসবে রূপ নেয় জামায়াতের হাত ধরে। চলে ১ অক্টোবর থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত। আর এ সকল অত্যাচার-নির্যাতনের বিষয়ে নির্দেশনা আসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক জিয়ার অফিস থেকে। সেই নির্বাচনে জয়লাভের পর বিএনপি-জামায়াত জোটের যে সন্ত্রাসের রাজনীতির সূচনা হয়েছিল তা পরবর্তী পাঁচ বছর ধারা বাহিকভাবে চলতে থাকে। এই সময়কালে বিএনপি-জামায়াত জোট সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও সাবেক সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারসহ আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করে। এই সময়টাতেই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ১৮ বারের বেশি চেষ্টা চালানো হয়। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করার মতো ঘটনাও ঘটেছিল বিএনপি-জামাতের সেই দুঃশাসনের কালেই। এই প্রজন্ম কি জানবে না সেইসব ইতিহাস?