বিদেশে থেকেও জমির পর্চা পাবেন ভূমি মালিক

বিদেশে থেকেও জমির পর্চা পাবেন ভূমি মালিক

প্রবাসে অবস্থান করেও দেশে মালিকানাধীন জমির পর্চা নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারী) জেলা প্রশাসক সম্মেলনের ভূমি সংক্রান্ত কর্ম অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি।

আগামী পহেলা বৈশাখ বা ১৪ এপ্রিল থেকে ভূমি কর অনলাইনে ছাড়া জমা দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে বলেও জানান মন্ত্রী।

ভূমি সংক্রান্ত কাজের বড় অংশ কাজ করে ডাক বিভাগ। তাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না- জানতে চাইলে সাইফুজ্জামান বলেন, “ডাক বিভাগের সঙ্গে আমাদের পর্চা নিয়ে একটা চুক্তি হয়েছে। তাদের আমরা বলেছি, তারা যেন লোকাল যারা পর্চা চায়, তাদের যেন মেইল করে বা ডাকযোগে পাঠানো হয়।

“সামনের দিনে বিদেশে যারা আছেন প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন, তারা ওখানে বসে পর্চা চাইলে ডাকের মাধ্যমে পেয়ে যাবেন।”

ভূমি কর জমার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের ভূমি কর এখন অনলাইন করা হয়েছে, তবে এটা কিন্তু ম্যানুয়ালিও আছে। আমি স্পষ্ট মেসেজ দিচ্ছি, আগামী পহেলা বৈশাখ থেকে ম্যানুয়াল পদ্ধতি পুরোপুরি বন্ধ করে দেব। শতভাগ অনলাইন করা হবে ভূমি কর। ম্যানুয়ালের আর কোনো সুযোগ থাকবে না।”

ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে চলমান মামলা নিষ্পত্তি করা নিয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন, “আইন সংশোধন করা হচ্ছে। অনেকগুলো আইন হাতে নিয়েছি। বিধিমালাও সংশোধন করা হবে।

“এই সংসদে হাট-বাজার আইন পাস হয়ে যাবে। ভূমি ব্যবহার আইন, ভূমি প্রতিরোধ আইন এগুলো নিয়ে কাজ করছি। খুব সহসা এগুলো কেবিনেটে পাঠানো হবে।”

জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে আইন সংস্কারের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে কর্মপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা ওঠে। খাস জমি কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণের প্রস্তাব দেন ডিসিরা, এজন্য বাজেটও চেয়েছেন তারা।

এই বিষয়ে সাইফুজ্জামান বলেন, “বাজেটটা তাদের দেওয়া হয়, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তবে সচিব মহোদয় সেটা দেখে বুঝে সাপোর্ট দেন। আমাদের কী পরিমাণ খাস জমি, তা ল্যান্ড ডেটায় আপডেট হচ্ছে। ল্যান্ড ডেটা ব্যাংকে জমা হচ্ছে।

“প্রত্যেক জেলার ডিসিকে বলা হয়েছে, তাদের জেলার খাস জমি যেন বেশি করে ‘রিকভার' করতে পারেন। কারণ আমাদের খাস জমিগুলো অনেকভাবে বেহাত হয়ে পড়ে আছে।”

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা এসব নিয়ে কাজ করছি। এসি ল্যান্ডরা এখানে আসেন একটা সময়ের জন্য। শুরুতে যারা এসিল্যান্ড হিসেবে এখানে আসেন, তাদের বুঝতে একটু সময় লাগে। তাদের বোঝার জন্য আমরা ট্রেনিং দিয়ে থাকি। যারা চৌকস এসিল্যান্ড তাদের বুঝতে কোনো সমস্যা হয় না।”

দেশের ডিজিটাল ল্যান্ড সার্ভের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, “ডিজিটাল সার্ভে সেখানে শুরু করেছি, যেখানে হয়নি। যেমন, বরগুনা, পটুয়াখালী। পটুয়াখালীতে একটা ডিজিটাল সার্ভের জন্য পাইলট প্রজেক্ট করেছি। আমরা আরও দুটো জেলাযুক্ত করেছি। তা হলো পাবনা ও সিরাজগঞ্জ। এগুলো শেষ করার পর আমরা সারাদেশে ডিজিটাল সার্ভের কাজ শুরু করব।”

অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে ডিসিদের নজর রাখার তাগিদ

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে জেলা প্রশাসকদের ‘তীক্ষ্ণ দৃষ্টি’ দিতে বলেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম।

ডিসিদের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে আমরা যে বাঁধগুলো দিই, সেখানে রাতের বেলা নদীর কিনারা থেকে বালু উত্তোলনের জন্য বাঁধগুলো আর টেকসই হয় না, ধসে পড়ে যায়। এসব ব্যাপারে তাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিতে বলেছি।”

জাহিদ ফারুক বলেন, “গণমাধ্যমকেও দায়িত্ব নিয়ে এসব অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের মুখোশ তুলে ধরতে হবে।”

বালুমহাল চালু রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, “বালু উত্তোলন করতে হবে। তা না হলে দেশে যে উন্নয়নমূলক কাজগুলো হয়, সেগুলো করা যাবে না।

“আমরা ডিসিদের বলেছি, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশলীরা গিয়ে যেখানে বালু মহাল হিসেবে চিহ্নিত করবে, কেবল সেখান থেকেই বালু উত্তোলন করা যাবে। তাহলে আমরা বালুর প্রয়োজনীয়তা মেটাতে পারব, পাশাপাশি নদীভাঙন রোধ করতে পারব।”

ডিসিদের অনেকে তাদের জেলায় নদীভাঙনের কথা তুলে ধরেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কোনো এলাকা থেকে যখন সমস্যার কথা আসে, তখন আমরা একটা সমীক্ষা চালাই। সমীক্ষা না চালালে কাজ টেকসই না হলে পরে আমাদের প্রকৌশলীদের উপর দোষারোপ হয়।”