হারিছ চৌধুরীর মেয়েকে হুমকির অভিযোগ

হারিছ চৌধুরীর মেয়েকে হুমকির অভিযোগ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরীকে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সামিরার চাচাতো ভাই রাহাত চৌধুরী সোমবার রাতে এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ কানাইঘাট থানায় দাখিল করেছেন। আর এ অভিযোগ তোলা হয়েছে প্রয়াত হারিছ চৌধুরীর এক সময়ের ঘনিষ্ঠজন ও তারই চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

হুমকি সম্বলিত একটি ভিডিও ক্লিপও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তবে- পুলিশ প্রাথমিকভাবে অভিযোগটি আমলে না নিলেও ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতা হারিছ চৌধুরী ২০২১ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ঢাকায় মারা যান। পিতার মৃত্যুর পর চাচা কানাইঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আশিক চৌধুরীর সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে সামিরা চৌধুরীর দ্বন্দ্বে সূত্রপাত ঘটে।

পরবর্তীতে স্থানীয় সড়কের বাজারে হারিছ চৌধুরীর প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা পরিচালনা ও হিসাব নিয়ে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়। তবে- সেটি এতদিন প্রকাশ পায়নি। সম্প্রতি কানাইঘাটের দর্পনগরে ‘চৌধুরী বাড়িতে’ শীতবস্ত্র বিতরণের একটি অনুষ্ঠানে দেয়া আশিক চৌধুরীর বক্তব্যকে ঘিরে দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ পায়।

এবং আশিক চৌধুরীর বক্তব্য সম্বলিত ওই ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে আশিক চৌধুরী তার ভাতিজি সামিরা চৌধুরীকে ‘গলা টিপে’ হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন রাহাত চৌধুরী। 

অভিযোগে জানানো হয়; গত ১৭ই জানুয়ারি সকালে আশিক উদ্দিন চৌধুরীর বাবার নামে ‘রফিকুল হক চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ’ এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। সেদিন হারিছ চৌধুরীর বাড়িতে সংগঠনের যাত্রা শুরু ও শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সামিরা তানজিন চৌধুরীকে ‘গলাটিপে মারার’ হুমকি দেন আশিক চৌধুরী। এ ছাড়া হারিছ চৌধুরীর স্বজনদের বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য করেন তিনি। এর প্রেক্ষিতে হারিছ চৌধুরীর ছোট ভাই কামাল চৌধুরীর ছেলে রাহাত চৌধুরী থানায় অভিযোগ দাখিল করেন। এতে তিনি তার পরিবার ও সামিরার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। থানায় আইসিটি আইনে মামলা গ্রহণের আবদার রাখলেও পুলিশ গতকাল পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। কানাইঘাট থানার ওসি তাজুল ইসলাম মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘একটি ভিডিও ক্লিপে হুমকি প্রদানের ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আমরা সেটি রেখেছি। তদন্তের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে- ব্যারিস্টার সামিরা চৌধুরী চাইলে অনলাইনে থানায় জিডি করতে পারেন- সে পরামর্শ পুলিশের তরফ থেকে পরিবারকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।’ এদিকে- সামিরা চৌধুরী বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে। এ কারণে তার পক্ষ থেকে রাহাত চৌধুরী থানায় এ অভিযোগ দিয়েছেন। কয়েক মাস আগে তিনি দেশে এসেছিলেন। তখন মরহুম পিতা হারিছ চৌধুরীর রুহের মাগফেরাত কামনায় সড়কের স্কুলে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন। 

এতে সিলেট বিএনপি’র নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন- হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর পর এতিমখানা বাবদ রাখা টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছিলো। এ নিয়ে আশিক চৌধুরীর সঙ্গে সামিরার দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। এরপর থেকে বাড়িতে থাকা রাহাত চৌধুরীসহ ঘনিষ্ঠ স্বজনরা এতিমখানায় যাওয়া আসা এবং খোঁজখবর রাখছিলেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আশিক চৌধুরী এতিমখানার এ প্রসঙ্গটিও তার বক্তব্যে তুলে এনেছেন।

এতে আশিক চৌধুরী বলেছিলেন- ‘এতিমখানা টিকিয়ে রাখতে আমার যত শক্তি নিয়োগ করা লাগে, আমি করবো ইনশাআল্লাহ। কোনো বাজে মানুষ এতিমখানায় ঢুকবে, এতিমখানাকে নষ্ট করবে, তাদেরকে ঢুকতে দেবো না। মোটেও ঢুকতে পারবে না। এতিমখানার কোনো রুজি নাই। যে ক’জন মানুষ এতিমখানায় সহযোগিতা করছেন, নিজের খেয়ে করছেন। এতিমখানায় বছরে সরকার কিছু টাকা দেয় আর বাকি টাকা পরিবার থেকে ও মানুষে সহযোগিতা করেন। হারিছ চৌধুরী আজ দুনিয়ায় নেই, তিনি থাকলে কাল রাতে আমি আমার ঘরে সেলিম, ফখর, ফজইসহ কয়েকজন গল্প করেছি। তখন আমি বলেছি, যেভাবে পারি একটা বছর আমরা এতিমখানাকে চালিয়ে নিই। 

এরপরে আমার বিশ্বাস, আওয়ামী লীগের পতন হবে। আর আওয়ামী লীগের পতন হলে বিএনপি আসবে, বিএনপি এলে তাদের কাঁধে এই এতিমখানা তুলে দিতে পারবো। হারিছ চৌধুরী আর কিছু রেখে যাননি, এই এতিমখানা রেখে গেছেন, এটা তার স্মৃতি, বিএনপি’র কেউ না কেউ কাঁধে নিয়ে নেবেন।’ বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে আশিক চৌধুরী তার ভাতিজি সামিরা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলেন- ‘হারিছ চৌধুরীর কমবয়সী মেয়ে আসছে, তাকে চ্যানেলে চ্যানেলে নেয়া হচ্ছে। গলাটিপে ধরে হারিছ চৌধুরীর মেয়েকে মেরে ফেলবো। আমি তার মায়ের জামাই, আমি তার বাপ। আজ বাবা দুনিয়ায় নেই, আমি তার বাবা। ধৈর্য অনেক ধরেছি, গলাটিপে ধরবো। আর আমার বাড়িতে ঢুকবে কানাকানি করার জন্য, মারতে মারতে বাচ্চাদের বাড়ি থেকে বের করে দেবো।’

এ ব্যাপারে আশিক চৌধুরী জানিয়েছেন- ‘হারিছ চৌধুরী ১২ বছর পলাতক ছিলেন। তাকে আগলে রেখেছিলো কে? তার এতিমখানা আমি চালিয়েছি। যে টাকা ছিল সেই টাকা থেকে খরচ করেছি। হারিছ চৌধুরী যেখানে কোনো দিন প্রশ্ন তুলেননি সেখানে এখন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এজন্য তিনি ভাতিজা সামিরা চৌধুরীর চেয়ে তার আশপাশে থাকা কিছু মানুষকে দায়ী করেন। ওই মানুষজনই হারিছ চৌধুরীর স্বপ্ন এতিমখানাকে ধ্বংস করতে চক্রান্ত চালাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।’ সূত্র: মানবজমিন