লিডিং ইউনিভার্সিটির দুই শিক্ষকের পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ

লিডিং ইউনিভার্সিটির দুই শিক্ষকের পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ

‘আমাদের স্যার-ম্যাম কই? জবাব চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমলাতন্ত্র নিপাত যাক, শিক্ষার আলো মুক্তি পাক’, ‘জাস্টিস ফর রাজন দাশ...’ পোস্টার হাতে বরখাস্ত স্থাপত্য বিভাগের দুই শিক্ষকের পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (১৫ অক্টোবর) সকালে সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। পরে তারা শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে সমাবেশ করেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রেজারারের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। দুই শিক্ষককে বহাল না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভ চলাকালে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ‘আমাদের স্যার-ম্যাম কই? জবাব চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমলাতন্ত্র নিপাত যাক, শিক্ষার আলো মুক্তি পাক’, ‘জাস্টিস ফর রাজন দাশ...’ পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও শিক্ষকদের বহালের দাবি করেন তারা।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিক্ষোভ চলার একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলেও ব্যর্থ হয়। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার বনমালী ভৌমিকের কক্ষে অবস্থান নিয়ে দুপুর ১টার দিকে তালা ঝুলিয়ে দেন। দুজন শিক্ষকের বরখাস্ত আদেশ বাতিল ও তাদেরকে বহাল করার দাবি না মানলে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য স্থপতি কাজী আজিজুল মাওলা যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন। এই সুযোগে ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হয়ে গত ১২ অক্টোবর স্থাপত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রাজন দাশ ও শিক্ষক স্থপতি সৈয়দা জেরিনা হোসেনকে বরখাস্ত করেন। 

উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে ট্রেজারারের বরখাস্ত করার ঘটনাটি আক্রোশমূলক দাবি করে শিক্ষার্থীরা বলেন, নিয়মবহির্ভূতভাবে দুজন শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদেরকে অনতিবিলম্বে বহাল করতে হবে। দাবি মানা না পর্যন্ত স্থাপত্য বিভাগের সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘাটের হুঁশিয়ারি দেন তারা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, দুজন শিক্ষকের কিছু অনিয়ম নিয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছিল। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আসার পর অভিযুক্তদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তারা যখন নোটিশের কোনো জবাব দিচ্ছিলেন না, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ বডির সিন্ডিকেট সদস্যদের যা মনে হয়েছে তারা সেটা করেছেন। এখন শিক্ষার্থীরা দাবি করছে, শিক্ষকদের পুনর্বহাল করতে। কিন্তু এটা আমাদের এখতিয়ারের বাইরের বিষয়। এখানে যারা অথরিটি আছেন তারা এ বিষয়ে বলতে পারবেন। আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিজে কথা বলার চেষ্টা করছি। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে আমাকে সম্মান জানাতে হবে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বরখাস্ত স্থাপত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রাজন দাশ বলেন, উপাচার্য যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকার সুযোগে এ ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। ভুয়া অভিযোগে গত ১১ অক্টোবর আমাকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাব দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে পরদিন ১২ অক্টোবর মেইলে বরখাস্ত আদেশ পাঠানো হয়। এতে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে ট্রেজারার বনমালী ভৌমিকের স্বাক্ষর রয়েছে। একই কাণ্ড ঘটানো হয়েছে স্থপতি জেরিনা হোসেনের ক্ষেত্রেও। উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে বরখাস্ত বা শোকজ করাও বিধিসম্মত নয়। তা ছাড়া একজন ট্রেজারার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী এসব করতে পারেন না। এ জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাননি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, তিনি যা করেছেন তা বিধি অনুযায়ী করেছেন। 

কী বিধি? এ প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর দেননি। এ ছাড়া উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে ট্রেজারার ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে শিক্ষক বরখাস্ত করার বৈধতা কী? এ প্রশ্নেরও উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন তিনি।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত উপাচার্য স্থপতি কাজী আজিজুল মাওলার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি লিখিতভাবে জানিয়ে দেন, দুই শিক্ষকের বরখাস্ত আদেশটি ভুয়া। ট্রেজারার যদি ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হয়ে কাজটি করে থাকেন, তা হলে সেটিও বিধিসম্মত হয়নি। বরং তাতে স্পষ্টত আইন লঙ্ঘন হয়েছে।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত উপাচার্যের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি শিক্ষার্থীদের লিখিতভাবে জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।