শাবির কিলোরোডে ৩শ’চা গাছ
ছোট্ট সবুজ পাহাড়, নদী-নালা, খাল-বিল প্রাকৃতিক সম্পদ আর সৌন্দর্যে ভরপুর দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ সিলেট। সিলেটের সৌন্দর্যে মুগ্ধ ও আকৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন কবি, সাহিত্যিক ও পর্যটক ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সাহিত্য রচণা করেছেন।
সিলেটের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক চা বাগান। কয়েক লাখ একর জায়গার এ চা-বাগানগুলোতে দেশের শতকরা ৯৫ ভাগ চা উৎপন্ন হয়।
এ ঐতিহ্যকে ধারণ করে সম্প্রতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপন হয়েছে ৩শ’র অধিক চা গাছ। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নয়, কেবল ক্যাম্পাসের সোন্দর্য বর্ধণেই এসব রূপন করা হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যাণ্ড এনভারনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের প্রধান ও অ্যাস্টেট কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. রোমেল আহমেদ।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩ টায় এসব চা গাছ পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, বর্ষাকালে চা গাছে নতুন কুঁড়ি ও পাতা জন্মালে খুব সুন্দর ও মসৃণ দেখায়। মনে হয়, এক বিরাট সবুজ গালিচা দিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা আচ্ছাদিত করে রাখা হয়েছে। মাঝে মাঝে কিছু কিছু বড় গাছ থাকে যা চা গাছকে রোদের প্রখরতা থেকে রক্ষা করে। কড়া রোদ আবার চা গাছের জন্য ক্ষতিকর।
আমাদের এই কিলোরোড ক্যাম্পাসের ঐতিহ্য, সৌন্দর্য ও সবার আবাগের জায়গা। এই কিলোরোডকে ঘিরে সবারই স্মৃতি রয়েছে। সিলেট চায়ের জন্য বিখ্যাৎ। সিলেটের ঐতিহ্যকে ধারণ করেই উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন মহোদয়ের উদ্যোগ ও সহায়তায় আমরা কিলোরোডের এসব চায়ের চারা রোপণ করি। একই সড়কে কিছুদিন আগে প্রায় শতাধীক রাঁধাচূড়া গাছও রোপণ করা হয়।
কিলোরোডে চা গাছ রোপণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের স্নাতক চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী নাজনীন লিজা বলেন, আমাদের কিলোরোড ঋতুভেদে বছরব্যাপী বিভিন্ন রুপে সোন্দর্য ছড়ায়। সম্প্রতি কিলোরোডে চা গাছ রোপণ আমাদের ঐতিহ্য ও সোন্দর্যকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাদ্য প্রকৌশল চা প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক বলেন, সিলেট চায়ের রাজধানী। এ অঞ্চল মূলত চায়ের জন্যই পৃথিবীব্যাপী সুপরিচিত। ফলে যেকেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ মাত্রই কিলোরোডে যখন চা পাতা সমৃদ্ধ বৃক্ষ দেখবে, তাতে প্রথমেই সিলেট সম্পর্কে একটা বিষদ ভাললাগা কাজ করবে। যারা এমন উদ্যোগ নিয়েছেন তারা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সিলেট চায়ের রাজধানী। সিলেটের চা বাগানের সুনাম বিশ্বব্যাপী। আমাদের ক্যাম্পাসে একটা প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় থাকে। ক্যাম্পাসে আমরা আগর গাছ থেকে শুরু করে বিভিন্ন গাছ রোপণ করে যাচ্ছি। কিছুদিন আগেই আমাদের এখানে আগরবাগান স্থাপণ করা হয়। আমাদের নিজস্ব চা বাগান আছে। বাংলাদেশে এটিই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, যাদের নিজস্ব চা বাগান রয়েছে। এ বাগান আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংস্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণায় চা এর নমূণার যোগান দিচ্ছে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিলোরোড সবার স্মৃতি এবং ঐতিহ্যের একটা বড় অংশ। দুপাশে লেক বিশিষ্ঠ কিলোরোড তার গাছের ছাঁয়ায় বছরব্যাপী এক অনাবিল সোন্দর্য ছড়িয়ে যাচ্ছে। কিলোরোডে ৩'শ এর অধিক চা বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। এটা আমাদের সোন্দর্য আরও ফুটিয়ে তুলবে। এসব রক্ষণাবেক্ষণে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কিলোরোড সবার ঐতিহ্যের ধারাবাহক। সুতরাং এর যত্ন নেয়াও সবার কর্তব্য।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৭ সালের মে মাসে গবেষণা ও ফিল্ড ওয়ার্ক করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি (এফইটি) বিভাগের অধীনে পরীক্ষামূলক একটি চা বাগানের উদ্বোধন করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা দূরের কোনো বাগানে না গিয়ে নিজস্ব চা বাগানে নিজেদের গবেষণা কাজ করতে পারছে।