খালেদার আন্দোলন ঘোষণা নিয়ে শরিকদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব:

সত্যবাদী কে? বিএনপি নাকি গণতন্ত্র মঞ্চ?

সত্যবাদী কে? বিএনপি নাকি গণতন্ত্র মঞ্চ?

বর্তমান সরকারের পতনের এক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলছেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া একদফার আন্দোলন চালিয়ে নিতে বলেছেন। অথচ বিএনপির মহাসচি এই দাবি প্রত্যাখান করেছেন। বলেছেন, খালেদা জিয়া কোনো নির্দেশনা দেননা। মির্জা ফখরুলের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। দুই শরিক দলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে রীতিমত দ্বিধাদন্ধে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন- খালেদা জিয়ার ঘোষণা নিয়ে কেন সত্য বলছেন আর কে মিথ্যা বলছেন? এর উত্তর খুঁজছেন তারা।

গত মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।  

খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ শেষে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছেন আপনারা যারা বাইরে আছেন তারা সবাই মিলে আন্দোলন করেন। আমি দেখতে চাই আপনার আন্দোলন করছেন, আন্দোলন করতে হবে। আমাদের এই আন্দোলনে ওনার সমর্থন আছে। আমাদের একজন নেতা বলেছেন সরকার একটা নির্বাচনের জাল বিছানোর চেষ্টা করছে। উনি বলেছেন, কোনো অবস্থায় এই সরকারের অধীনে নির্বাচনী ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।’

চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন দলীয় কোনও নির্দেশনা দেন না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া আন্দোলনের কোনো নির্দেশনা দেন না। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আছেন, স্ট্যান্ডিং কমিটি আছে- সেভাবেই দলের সিদ্ধান্ত হয়। চেয়ারপারসন অসুস্থ। তিনি কোনো দলীয় নির্দেশনা দেন না। তাকে নিয়ে এসব কাজ করবেন না।’

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমি সেদিনই বলেছি, খালেদা জিয়া রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার পরিস্থিতিতে নেই। আমরা তার কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কিছু কথা বলেছেন। বলেছেন, আন্দোলন বিশেষ কোন দলের না। দেশে যেনো আর কোনদিন এরকম পরিস্থিতি না আসে সেটার জন্য আন্দোলন। ’বিএনপির মহাসচিব তাহলে  খালেদা জিয়া কোন সিদ্ধান্ত দেন না বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করলেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হয়তো ডে-টু-ডে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি নেই বলে একথা বলেছেন।’

বিশেষ সুবিধা ভোগের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে এক দফা আন্দোলন করলেও বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের মুখোশ জনগণের সামনে উন্মোচন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নূহ উল আলম লেনিন। তিনি বলেন, ‘ওদের সিদ্ধান্ত আসে লন্ডন থেকে। খালেদা জিয়া যদি বলে থাকেন যে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়- তবে সেটা তিনি কতটুকু জেনে বলেছেন তা বিবেচনার বিষয়। কেননা তিনি ততটুকুই জানেন, যতটুকু তার নেতারা তাকে জানায়। একেক নেতা একেক জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়ে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করছেন, তাদের নিজেদের মধ্যেকার দূরত্ব জনগণের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে ‘

গত ৯ই আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বেগম খালেদা জিয়াকে। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। ৭৮ বছর বয়সী বিএনপি নেত্রী লিভার সিরোসিস, আর্থাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এছাড়া তার মেরুদণ্ড, ঘাড়, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদন্যতায় ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন। আর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।