সিলেট জেলা ছাত্রলীগের ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’ কমিটি বিলুপ্তির দাবি
গত বছরের অক্টোবরে সিলেট জেলা ও মহানগর শাখার সভাপতি-সেক্রেটারি মনোনীত করে এক বছর মেয়াদী কমিটি পুনর্গঠন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে কমিটি গঠনের পর থেকেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
‘টাকার বিনিময়ে’ পদ দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে জেলা ছাত্রলীগের একাংশ ওই সময় সিলেটে টানা কয়েকদিন মিছিল-সভা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এরই মাঝে চলতি বছরের অক্টোবরে জেলা ছাত্রলীগের দুই নেতাবিশিষ্ট কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এই কমিটি বিলুপ্তির দাবি নিয়ে ফের রাজপথে জেলা ছাত্রলীগের সেই বিদ্রোহী অংশ।
‘দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য’র প্রতিবাদে সিলেটে সোমবার (১২ ডিসেম্বর) শোডাউন করেছে ‘তেলিহাওর গ্রুপ’ নামে পরিচিত জেলা ছাত্রলীগের একাংশ। দুপুরে এ গ্রুপের উদ্যোগে মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি-জামায়াতবিরোধী নানা স্লোগান দেন। পরে পথসভায় ‘দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য’ ছাত্রলীগের প্রতিহত করার ঘোষণা দেন তারা।
এদিকে, বিএনপি-জামায়াতবিরোধী এই কর্মসূচিতে জেলা ছাত্রলীগের এই অংশের নেতারা ‘নিজেদের বিরুদ্ধেও’ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠিত পথসভায় সিলেট জেলা ছাত্রলীগের ‘মেয়াদোত্তীর্ণ অবৈধ’ কমিটি বাতিলের জোর দাবি জানান তারা।
সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে মহানগরের কাজিরবাজার থেকে জেলা ছাত্রলীগের ব্যানারের হাজারের অধিক নেতাকর্মী মিছিল বের করেন। মিছিলে নেতৃত্ব দেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান, সাবেক উপ-পাঠাগার সম্পাদক এম আর মুহিব ও ছাত্রলীগ নেতা সৌরভ জায়গিরদার।
মিছিলটি মহানগরের চৌহাট্টায় গিয়ে শেষ হয়। সেখানে পথসভা করে ছাত্রলীগ। পথসভায় মূল বক্তব্য রাখেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-পাঠাগার সম্পাদক এম আর মুহিব, পরিচালনায় ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা সৌরভ জায়গিরদার।
এদিকে, পথসভার শেষ পর্যায়ে সভার সভাপতি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-পাঠাগার সম্পাদক এম আর মুহিব তার বক্তব্যে বলেন- আওয়ামী লীগ প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব প্রদান করবেন। নতুন নেতৃত্বের কাছে আমাদের জোর দাবি- সিলেট জেলা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ অবৈধ কমিটি বিলুপ্ত করে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নের মাধ্যমে নতুন কমিটি অনুমোদন করবেন। দুই নেতাবিশিষ্ট সংবিধান পরিপন্থী এই কমিটি গত দীর্ঘ এক বছরে ৩১টি ইউনিট কমিটির মধ্যে মাত্র ১১টি ইউনিট পুনর্গঠন করেছে, যা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রবিরোধী।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ অপেক্ষা আর নানা জল্পনা-কল্পনার পর গত বছরের ১২ অক্টোবর দুই নেতাবিশিষ্ট কমিটি পায় সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ। নাজমুল হোসেনকে জেলার সভাপতি ও রাহেল সিরাজকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে এক বছরের জন্য এ কমিটির অনুমোদন দেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
একই দিনে জয় ও লেখক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুর রহমান মুহিবসহ ৬ নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোনীত করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে জাওয়াদ ও মুহিব কেন্দ্রীয় সদস্যের পদ ওই দিনই প্রত্যাখ্যান করেন। এদের মধ্যে জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খান সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন।
বেশ কয়েকদিন তাদের প্রকাশ্য বিক্ষোভ-বিদ্রোহের পরও গঠিত জেলা কমিটি বহাল রাখে কেন্দ্র। সেই থেকে কমিটি নিয়ে জেলা ছাত্রলীগে চাপা অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছিলো। জেলার এক বছরের জন্য গঠিত দুই নেতাবিশিষ্ট সেই কমিটির মেয়াদ চলে যাওয়ায় সেই চাপা অসন্তোষ আজ ফের প্রকাশ্য ক্ষোভ হয়ে ঝরলো মহানগরের চৌহাট্টায়।