সিলেট বিএনপিতে অস্বস্তি, নেপথ্যে আরিফ-মুক্তাদির দ্বন্দ্ব

সিলেট বিএনপিতে অস্বস্তি, নেপথ্যে আরিফ-মুক্তাদির দ্বন্দ্ব

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়ে রাজপথে আন্দোলন বেগবান করার চেষ্টা করছে বিএনপি। এজন্য সব বিভেদ ভুলে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু সিলেটে ঘটছে ব্যতিক্রম। নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে পুরনো দ্বন্দ্ব। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে বহিষ্কার করা হয়েছে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলয়ের দুই নেতাকে।

আরিফ বলয়ের নেতা ও বহিষ্কৃতরা বলছেন- মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অগঠনতান্ত্রিক পন্থায় তাদের বহিষ্কার করেছেন। বহিষ্কৃতদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও অসত্য। মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। ফলে সিলেটে ফের খন্দকার মুক্তাদির ও আরিফ বলয়ের মধ্যকার পুরনো দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন দলের নেতা-কর্মীরা।

দল থেকে সাময়িক বহিষ্কৃতরা হলেন- মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহ আহমদ খসরু ও দিনার খান হাসু। এর মধ্যে দিনার খান হাসু সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

২৪ সেপ্টেম্বর রাতে মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী দুই নেতার বহিষ্কারের বিজ্ঞপ্তি পাঠান গণমাধ্যমে।

দলীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ পান সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এরপর আরিফের বাসা-সংলগ্ন ব্যক্তিগত অফিসে তার অনুসারীরা মিষ্টিমুখ করেন। এতে নেতৃত্ব দেন সালেহ আহমদ খসরু ও দিনার খান হাসু। নির্বাহী সদস্য থেকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদে পদোন্নতি পাওয়ায় আরিফ বলয়ের নেতা-কর্মীরা চাঙা হয়ে উঠেন।

এতদিন সিলেট বিএনপির নেতৃত্বে অনেকটা একক আধিপত্য ছিল চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের। একই পদে আরিফ আসীন হওয়ায় মুক্তাদিরের আধিপত্যে টান পড়তে পারে বলে মনে করছেন দলের অনেক নেতা-কর্মী। আরিফ দমিয়ে রাখতে তার বলয়ের অন্যতম নেতা খসরু ও হাসুকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে দাবি দলের একাংশের।

সূত্র আরও জানায়, মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটিতে সালেহ আহমদ খসরু সহসভাপতি ও দিনার খান হাসু যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কমিটিতে আরিফ বলয়ের প্রভাব কমাতে কমিটি অনুমোদন ও ঘোষণার আগেই তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে বলেও মন্তব্য অনেকের।

বহিষ্কার প্রসঙ্গে সালেহ আহমদ খসরু বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জিয়াউর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করছি। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ কখনো কেউ তুলতে পারেনি। ৬৩ বছর বয়সে এসে আমার বিরুদ্ধে এমন হাস্যকর  অভিযোগ তুলে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। যারা এটা করেছেন সেটা করার অধিকারই তাদের নেই।’

তবে নিয়ম মেনেই সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এখন মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। সালেহ আহমদ খসরু ও দিনার খান হাসু উভয়ই ওয়ার্ড কমিটির সদস্য। ওয়ার্ড কমিটির অনুমোদন দেয় মহানগর। তাই তাদের  বহিষ্কারেরও এখতিয়ার রয়েছে মহানগর শাখার।’

এ প্রসঙ্গে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত শুনে অবাক হয়েছি। দল থেকে কাউকে বহিষ্কার করতে হলে আগে তাকে কারণ দর্শানো নোটিস দিতে হবে। অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের   সুযোগ দিতে হবে।’