বন্যায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ

সিলেটে এক সপ্তাহে ২১৯ জন ডায়ারিয়া রোগী

সিলেটে এক সপ্তাহে ২১৯ জন ডায়ারিয়া রোগী

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বিভিন্ন উপজেলায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ। জেলার ১১টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত এক সপ্তাহে ২১৯ জন ডায়ারিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। তবে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি বলে ধারণা স্বাস্থ্য বিভাগের।

ডায়রিয়ার পাশাপাশি অনেকেই চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। চর্মরোগের জন্য কেউ হাসপাতালে ভর্তি না হলেও রোগীরা সেবা নিতে আসছেন। জেলায় চিকিৎসা সেবার জন্য বর্তমানে ১৪০টি চিকিৎসা দল কাজ করছে। সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বেলা দুইটা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৪৮ জন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত আছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। উপজেলার ১৮ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর মধ্যে ১৫ জনই শিশু। এর বাইরে জেলার গোয়াইনঘাট, বিশ্বনাথ ও দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির পর ডায়রিয়া ও চর্মরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২২ জুন থেকে ডায়ারিয়া আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হতে শুরু করেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর বহির্বিভাগে প্রতিদিন শতাধিক ব্যক্তি চর্মরোগের জন্য চিকিৎসা নিতে ভিড় করছেন।

বন্যায় জেলার সাতটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আক্রান্ত হয়েছিল। এর মধ্যে পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। অন্য চারটি পানিতে তলিয়ে না গেলেও বৃষ্টির পানিতে ক্ষয়ক্ষতি হয়। হাসপাতালগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। যাতে কেউ হাসপাতালে গিয়ে নতুন করে আক্রান্ত না হন। জেলার ২৬৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩৯টি।

হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে প্রয়োজনে নিজেদের স্যালাইন কেনারও অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সিলেটে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দুই লাখ খাওয়ার স্যালাইন সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আরও দুই লাখ খাবার স্যালাইন সরবরাহ করা হয়। জেলায় ১৪০টি চিকিৎসা দল পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি, খাবার স্যালাইনসহ বন্যায় আক্রান্ত এলাকাগুলোতে সরেজমিনে সেবা দিচ্ছে।

সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, যে পরিমাণ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন, এর চেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। তবে হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ায় সেটির হিসাব জানা যাচ্ছে না। বন্যায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোও আক্রান্ত ছিল।

সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত বলেন, বন্যার কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। এ ছাড়া চর্মরোগও ছড়িয়ে পড়ছে। জেলায় ১৪০টি চিকিৎসা দল কাজ করছে। তারা খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি সরবরাহ করছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত পানি বিশুদ্ধকরণ সাত লাখ বড়ি সরবরাহ করা হয়েছে।

জন্মেজয় বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, শুধু তাঁদের হিসাব থাকে, কিন্তু আক্রান্ত আরও বেশি হতে পারে। হয়তো ঘরেই তাঁরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁরা সব বিষয় মাথায় রেখে চিকিৎসা দল পরিচালনা করছেন। অনেক জায়গায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা নেই। সে জন্য চিকিৎসক দল দুর্গম এলাকায়ও যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই কাজ করছে। তিনি বলেন, ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। শিশুদের নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। ডায়রিয়া দেখা দিলে খাবার স্যালাইন খাওয়ানোর পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।