সিলেটে নাট্যকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় ৬০ জনকে আসামি করে মামলা

সিলেটে নাট্যকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় ৬০ জনকে আসামি করে মামলা

সিলেটে সংস্কৃতিকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় অবশেষ মামলা দায়ের করা হয়েছে।

শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করা হয়। এতে অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

তবে ঘটনার এক দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এমনকি ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদেরও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে মহানগরের কিনব্রিজ এলাকার সারদা হলে বিএনপির রোডমার্চ ও সমাবেশে যোগ দিতে আসা কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠে। হামলায় অন্তত ১০ জন সংস্কৃতিকর্মী আহত হয়েছেন বলে সংস্কৃতিকর্মীদের অভিযোগ। 

আহতদের মধ্যে রয়েছেন- লিটল থিয়েটারের আব্দুল কাইয়ূম মুকুল, নাট্যকর্মী হুমায়ুন কবির জুয়েল, চয়ন পাল শান্ত, নাট্যকার বিভাস শ্যাম যাদন, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্তের ছেলে লামানুজ গুপ্ত।

খবর পেয়ে সিলেটের সংস্কৃতিকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নাট্যকর্মীরা মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁরা দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

জানা গেছে, সিলেটের ৮৭ বছরের ঐতিহ্যবাহী সারদা হল দীর্ঘ ১১ বছর ধরে অনেকটা ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় ছিল। সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সংস্কারের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের কথা ছিল। এ উপলক্ষে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সেখানে নাট্য প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। এ জন্য সংস্কৃতিকর্মীরা বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে থেকে সেখানে মহড়া দেন।

বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে বিএনপির একদল নেতা-কর্মী অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়েন। এ সময় তাঁরা নারী সংস্কৃতিকর্মীসহ উপস্থিত নাট্যকর্মীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এতে বাধা দিলে কয়েকজন নেতা-কর্মী দলবদ্ধ হয়ে সংস্কৃতিকর্মীদের উপর হামলা চালান। পরে সংস্কৃতিকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যান।

হামলার খবর পেয়ে বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে ঘটনাস্থলে যান সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। সিটি করপোরেশন সারদা হল দেখভাল করে। আরিফুল এ সময় দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান।

তবে হামলায় বিএনপি জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন জেলার সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে বলেন- ‘কে বা কারা হামলা চালিয়েছে জানি না। তবে বিষয়টি অবশ্যই দুঃখজনক। যারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, তাঁদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, ‘মামলা হয়েছে। কারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত, পুলিশ তা খুঁজে বের করছে। এ জন্য পুলিশ আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে খতিয়ে দেখছে।’

এদিকে, ঘটনার প্রতিবাদে আগামী রোববার মহানগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালিত হবে। এর আগে বেলা তিনটায় সারদা হলে সংস্কৃতিকর্মীরা জমায়েত হয়ে বিকেল চারটায় নগরে মৌন মিছিল করে শহীদ মিনারে মিলিত হবে।