আমরা অজান্তেই বড়লোক হয়ে যাচ্ছি

আমরা অজান্তেই বড়লোক হয়ে যাচ্ছি

'নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। দিশেহারা হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ।' এমন একটা নিউজের লিংক পাঠিয়েছে এক ছোট ভাই। সকালে ঘুম থেকে জেগে নিউজটা পড়ে গত দিনের টুথপেস্ট কেনার কথা মনে পড়লো। পূর্বের মূল্যের চেয়ে দুই টাকা বেশি রেখে দোকানদার আমাকে বলে, "মামা সব জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। প্রতিটা জিনিসের দাম এখন দুই-তিন টাকা করে বেশি।"

কিছু দিন আগে মেসের জন্য বাজার করতে গিয়ে কাকতালীয় ভাবে এক মুদি দোকানে ক্যাম্পাসের এক জুনিয়রের সঙ্গে দেখা। সে ছাত্র রাজনীতি করে। সেও বাজার করতে আসছে। দেখলাম, তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সে দোকানির সঙ্গে কথা বলছে, 'এভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ কিভাবে চলবে?' এমন সব কথা। তার এই সমালোচনার কথা শুনে মনে হয়েছিল, সে দোকানির বেশ পরিচিত। অথচ তাকেসহ অনেকেই দেখি, উন্নয়ন এবং মাথাপিছু আয় বাড়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক প্রশংসা বাক্য লিখতে।

এদিকে গতকাল বাস কাউন্টারে টিকিটের জন্য গিয়ে দেখি টিকিটের দাম আগের চেয়ে ১শ টাকা বেশি। টিকিটের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কাউন্টার থেকে আমাকে বলে, "সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিসে। তাই আমাদের দাম বাড়াতে হচ্ছে।"

কাউন্টার থেকে রিক্সায় করে মেসে ফিরার পথে কথা বলি রিক্সার ড্রাইভার ভাইয়ের সঙ্গে। কথা বলে জানতে পারি উনার বাড়ি উত্তরবঙ্গে। অনেক কথার মাঝে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, সবকিছুর তো দাম বাড়ছে। আপনাদের ইনকাম বাড়ছে কি? তখন তিনি আমাকে বলেন, "মামা ইনকাম বাড়বে কি করে? হয় আগের চেয়ে তিন-চার ঘণ্টা বেশি সময় রিক্সা চালানো লাগবে, না হয় আপনাদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিতে হবে। কিন্তু, এতো সময় রিক্সা টানতে শরীরে তো আর কুলায় না। আর আপনাদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া চাইলে আপনিও রাগ দেখিয়ে সিএনজি'তে চড়ে যাবেন। আমাদের আর ইনকাম বাড়ে ক্যামনে মামা বলেন?" আমি উনার এই সাধারণ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারিনি।

কিন্তু, সে সময় আমাদের মন্ত্রীর কথা মনে মনে ভেবেছি আর মুচকি হেসেছি। আমাদের পরিকল্পনা মন্ত্রী না-কি বলেছেন, 'রাত পোহালেই আয় বাড়ছে বাংলাদেশের, আমরা টেরই পাচ্ছি না। আমরা অজান্তেই বড়লোক হয়ে যাচ্ছি।'

রাজীব বাবু 
শিক্ষার্থী ও গল্পকার