টাঙ্গুয়ার হাওরে হাউজ বোটে চুরি আতঙ্ক
সুনামগঞ্জের হাওরে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে হাউস বোটে ভ্রমণ। তবে সেখানে চুরির ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতার কথা বলছেন পর্যটকরা। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় পর্যটকদের এ আকর্ষণে ভাটা পড়তে শুরু করেছে। এসব হাউস বোটে চুরির ঘটনায় আতঙ্কিত পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন।
সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর এবং ১৮ সেপ্টেম্বর টাঙ্গুয়ার হাওরে ‘মায়াবতী’ ও বর্ষা নামে দুটি বোটে চুরি হয়। সোমবার বর্ষা বোটের এক পর্যটকের চুরি যাওয়া আইফোনটি চালু থাকলেও, সেটি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। মায়াবতী হাউস বোটে যে চুরির ঘটনা ঘটে তা ভয়াবহ। এতে ওই বোটে থাকা ১৫-২০ জন পর্যটকের মালামাল লুট হয়। চুরির ঘটনায় সোমবার রাতে টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে সুনামগঞ্জ সদরে এসে মামলা করেছেন ঢাকায় বসবাসকারী ভুক্তভোগী এক আইনজীবী।
ভুক্তভোগী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আঞ্জুমান আরা জানান, গত মঙ্গলবার টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে দেখার পর তারা বোটে রাতযাপন করেছেন টেকেরঘাট এলাকায়। একই স্থানে নোঙর করা ছিল আরও কয়েকটি হাউস বোট। সকালে ঘুম থেকে দেখেন তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, কাপড়চোপড় কিছুই নেই। এ ব্যাপারে তাহিরপুর থানায় যোগাযোগ করলেও পুলিশ প্রথমে কোনো সহায়তা দেয়নি। পরে পুলিশ সুপারের কাছে জানালে অভিযোগ নেয় তাহিরপুর থানা।
গেল এক মাসে টাঙ্গুয়ার হাওরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা অসংখ্য পর্যটক এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। সপ্তাহ খানেক আগে জলকুটির নামে একটি হাউস বোটে এবং গেল আট সেপ্টেম্বর জলকুমারী নামের আরেকটি হাউস বোটে চুরির ঘটনা ঘটে। এর আগে গেল ১১ আগস্ট জলবাড়ী মহারাজ নামের হাউস বোটে একইভাবে পর্যটকদের মালামাল চুরি হয়। জলবাড়ী মহারাজের ঘটনায় তাহিরপুর থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরে এ ধরনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন পর্যটন সংশ্লিষ্টসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।
তাহিরপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, পর্যটকবাহী হাউস বোটে চুরির ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন। এই শিল্পকে ধ্বংস করেতেই অশুভ চক্র এসব কাজ করছে। দ্রুত এই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
হাউস বোট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাসুকুর রহমান বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় ২০০টি পর্যটকবাহী হাউস বোট রয়েছে। কর্তৃপক্ষই রাতে পাড় থেকে দূরে হাওরে নোঙর করে রাখে হাউস বোটগুলো। ছোট ছোট নৌকা নিয়ে বোটের কাছে এসে চোরেরা প্রায়ই এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। কেউ দেখে ফেললে মাছ ধরার অজুহাত দিচ্ছে। পরে হাউস বোটের মালিক ও শ্রমিকদের দোষারোপ করে হাউস বোট আটক করে ক্ষতিপূরণ আদায় করার চেষ্টা করা হয়। এভাবে চলতে থাকলে চুরি তো বন্ধ হবেই না, উল্টো হাউস বোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।
তাহিরপুর থানার ওসি সৈয়দ ইফতেকার হোসেন জানান, পুলিশ সাধ্যমতো দায়িত্ব পালন করছে। চুরি যাওয়া একটি দামি ক্যামেরাসহ একজন চোরকে কয়েকদিন আগেও আটক করা হয়েছে। এখানে যারা পর্যটক আসেন হাউস বোট কর্তৃপক্ষকে বিশ্বাস করে আসেন। তাদেরও পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে কাজ করতে হবে। একেকটি হাউস বোটে এক-দু’জন করে নিরাপত্তাকর্মী থাকা জরুরি কিন্তু তারা সেটি করছেন না।
পুলিশ সুপার এহসান শাহ্ জানান, ‘বিশাল টাঙ্গুয়ার হাওরে শত শত পর্যটকবাহী নৌকা চলে। পুলিশের টহল দলের পক্ষে সম্পূর্ণটা দেখভাল করা কঠিন। পর্যটক বোটের মালিকরা একেকজন পর্যটকের কাছ থেকে প্রতি রাতে ৭-৮ হাজার টাকা নেন কিন্তু বোটে থাকা ২০-২৫ জন পর্যটকের জন্য একজন নিরাপত্তাকর্মীর ব্যবস্থা করতে পারেন না, এটি দায়িত্বশীলতার মধ্যে পড়ে না। তাদের অবহেলার কারণে বিশাল পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। তাদের খেয়াল রাখতে হবে কোনো অবস্থাতেই পর্যটকরা যেন হেনস্তা না হন। এমন কিছু হলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।