দুর্গন্ধ নিয়ে রাস্তায় চলাচল করেন জগন্নাথপুর পৌরবাসী, কথা রাখেননি মেয়র

দুর্গন্ধ নিয়ে রাস্তায় চলাচল করেন জগন্নাথপুর পৌরবাসী, কথা রাখেননি মেয়র

গোবিন্দ দেব, জগন্নাথপুর || সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরসভায় বর্জ্য নিষ্কাশনে অব্যবস্থাপনার ফলে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনায় পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে। পৌর শহরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়ির নিত্যদিনের ময়লা-আবর্জনা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শাখাবরাক খালসহ যেখানে-সেখানে ফেলায় শহরের পরিবশে নোংরা হচ্ছে। এসব বর্জ্য অপসারণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ময়লা-আর্বজনার গন্ধে অতিষ্ঠ জগন্নাথপুর পৌরবাসী।

স্থানীয়রা জানান, পৌরসভায় জনবল কাঠামোসহ নানা সংকটে শহর পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শহরের প্রতিদিনের ময়লা অপসারণের কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় দুর্গন্ধে বাতাস দূষিত হয়ে পড়ছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে শাখাবরাক খালের পানিতে প্রচুর কচুরিপানা জমেছে। কচুরিপানার কারণে খালের মধ্যে ফেলা আর্বজনা পানির তোড়ে ভেসে যেতে না পেরে জমে থাকছে। এই জমে থাকা আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এছাড়া কিছুদিন আগে কোরবানির পশুর বর্জ্য শাখাবরাক খালসহ যত্রতত্র ফেলার কারণে তা পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্গন্ধে বিশেষ করে শিবপাশা, আনমনু ও নোয়াপাড়ার মানুষ, শিক্ষার্থী, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ অফিস-আদালতগামী মানুষ বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ পৌরসভায় এখনও সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। পৌরসভার সাধারণ মানুষের দাবি, ময়লা ফেলার ডাম্পিং গ্রাউন্ড (ভাগাড়) না থাকার কারণে পৌরসভার বেশিরভাগ ময়লাই ফেলা হচ্ছে শাখাবরাক খালসহ যত্রতত্র। যে কারণে ময়লা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তবে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দাবি, তারা নির্দিষ্ট সময়েই ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জগন্নাথপুর পৌরসভার জগন্নাথপুর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তার পাশ দিয়ে প্রবাহমান খালের দুইপাশে ও সংলগ্ন জগন্নাথপুর মাদ্রাসা পয়েন্টের সম্মুখে এবং চিলাউড়া রাস্তার মুখে অস্থায়ীভাবে ময়লা স্তুপ করে রাখছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। বৃষ্টির পানিতে এসব ময়লার স্তুপ যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে মশা-মাছি সৃষ্টি হচ্ছে। শহরের জগন্নাথপুর বাজারের পাশের খালে ময়লার ভাগাড় ও কচুরিপানার কারণে পুরো শহরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। দুর্গন্ধের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না ব্যবসায়ী ও পথচারীরা। তারা জানান, এসব ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলার কারণে গন্ধ তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়ছে শহরজুড়ে।

পৌর এলাকার জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা দিলসুন্দর বলেন, ভোটের সময় এলে সবাই রাস্তাঘাট ও ময়লা ফেলার স্থান ঠিক করবেন বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু ভোটের পরে আর খবর নেই। দুর্গন্ধের জন্য রাস্তায় চলাফেরা করতে অসুবিধা হচ্ছে।

জগন্নাথপুর পৌরসভার বাসিন্দা পজু বণিক বলেন, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধের পাশাপাশি রাস্তায় পানি জমে থাকে। আমাদের নির্বাচিত কাউন্সিলররা তা দেখেও না দেখার ভান করেন। এতে এলাকার মানুষ এখন অতিষ্ঠ। রাস্তাঘাটে যত্রতত্র ময়লা ও আবর্জনা ফেলায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পৌর শহর থেকে দূরে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা মজুদের ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা জরুরি।

জগন্নাথপুর পৌরসভার পরিছন্নতা পরিদর্শক বিকলেষ চক্রবর্তী বলেন, বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার রাখতে শ্রমিক ও সুইপার রয়েছেন মোট ৬ জন। এছাড়া ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার জন্য আমাদের জায়গা নেই। অপরদিকে পৌরসভার যানবাহন কম থাকায় ও আধুনিক যানবাহনের অভাবে শহরের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

পৌর কাউন্সিলর কৃষ্ণ চন্দ্র বলে, সরকারি খালের উপরে দখল করে যারা আছেন, আমরা কয়েকদিনের মধ্যে তাদেরকে নোটিশ দেব এবং যেখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলা যাবে না বলে পৌরবাসীকে জানিয়ে দেব।

এ প্রসঙ্গে জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র আক্তারুজ্জামান আক্তার বলেন, জগন্নাথপুর (বাসুদেব বাড়ি) ও মাদ্রাসা পয়েন্টে ময়লা-আবর্জনা ফেলার বিষয়টি আমি দেখছি। পৌরশহরের ময়লা-আবর্জনা ডাম্পিং করতে চাই। কিন্তু জমি না পাওয়ায় এটি সম্ভব হচ্ছে না। শহরের রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও আবর্জনা ডাম্পিং করতে না পারায় পৌরবাসী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। আমি ডাম্পিং জোনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সরকারি জমি চেয়ে আসছি। কিন্তু নানা জটিলতায় এখন পর্যন্ত তা পাইনি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে জমি পাওয়ার চেষ্টা চলছে। আশা করি জায়গা প্রাপ্তি সাপেক্ষে কিছুদিনের মধ্যে ডাম্পিং জোন নির্মাণ করা হবে। শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।