শাবির উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন

আমরা মরে গেলেও তাঁর কি আসে যায়?

আমরা মরে গেলেও তাঁর কি আসে যায়?

‘আমরা বুধবার বিকেল ৩টা থেকে এখনও পানিও পান করিনি। ২৪ ঘন্টা পার হলো (বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটা)। একটা যৌক্তিক দাবি নিয়ে এখানে বসেছি। স্যাররা বারবার আসেন শুধু আলোচনা করার জন্য। আমরা তো আলোচনা চাই না। একটা অযোগ্য ভিসির পদত্যাগ চাই। যে ভিসি ক্যাম্পাসে পুলিশ এনে গুলি চালায়। ছাত্রদের রক্তাক্ত করে। স্যারদের বলে দিয়েছি আপনারা আমাদের দাবিতে একমত হন। তারা হচ্ছেন না। তাদের বলে দিসি মরে গেলে লাশটা নিয়ে যাইয়েন।’

বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় এভাবে কথাগুলো বলছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান আন্দোলনের আমরণ অনেশনরত শিক্ষার্থী জাহিদুল হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা তো উনার (উপাচার্য) সন্তান না, তাই কোন চিন্তা নাই। আমরা এখানে মরে গেলেও তার কি আসে যায়। ’

গত বুধবার বিকেল তিনটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনে বসেন। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনে ১৫ ছেলে শিক্ষার্থী ও ৯ মেয়ে শিক্ষার্থী রয়েছেন।

শাহরিয়ার নামে অনেশনরত আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনে এখন একটাই দাবি, ভিসির পদত্যাগ। তাকে পদত্যাগ করতেই হবে। এখন সিড়ির শেষ ধাপে আছি। প্রয়োজনে মরে যাবো। অনশন ভাঙ্গবো না।’

অনেশনস্থলে দেখা যায়, সড়কের মধ্যেই লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছেন অনশনকারীরা। এদের মধ্যে কেউ কেউ বই পড়ছেন। কুয়াশার হাত  থেকে রক্ষা পেতে মাথার ওপরে টানিয়েছেন সামিয়ানা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখ্য প্রতিনিধি নাফিজা আনজুম বলেন, ‘ যে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও গুলির নির্দেশ দেন। তার কাছে আমরা শিক্ষার্থীরা  কোনোভাবেই নিরাপদ না। তার অধীনে আমরা কিছুতেই ক্লাসে ফিরে যাব না। তাকে পদত্যাগ করতেই হবে।’

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে অনশনকারীদের একজন কাজল দাস অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে নগরের রাগিব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত বুধবার রাতেও আন্দোলন চলাকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন দুই শিক্ষার্থী। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

প্রসঙ্গত- গেল ১৩ জানুয়ারী বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণের’ অভিযোগে প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামেন ওই হলের ছাত্রীরা। দাবি পূরণ না হওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন তারা। শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনরতদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল বিভাগের ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

রোববার বেলা আড়াইটার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং শেষে রেজিস্ট্রার ভবন থেকে বের হলে উপাচার্যের পিছু নেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় উপাচার্য ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইসিটি ভবনে আশ্রয় নিলে শিক্ষার্থীরা  সেখানে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে রোববার বিকেলে এসে সহিংসতায় রূপ নেয় আন্দোলন। পুলিশ এসে উপাচার্যকে উদ্ধার করে। এসময় ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড ও ৩২ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ার কথা জানায় পুলিশ। আহত হন শিক্ষার্থীসহ অনেকেই। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাশেদ তালুকদারকে।