বির্তক এড়াতে ‘কঠোর’ এসএমপি কমিশনার
সাম্প্রতিক দুটি ঘটনায় বিভ্রতকর অবস্থায় পড়েছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশে (এসএমপি)। এক পুলিশপুত্রকে মাদকদ্রব্য দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা ও নিজেদের মধ্যে ৩ পুলিশ সদস্যের মারামারির ঘটনায় কিছুটা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এসএমপি নিয়ে।
তবে পুলিশের এই ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। ‘অপরাধী পুলিশদের’ ছাড় দিচ্ছেন না তারা। এ দুই ঘটনায় ৫ পুলিশ সদস্যকে সাময়ীক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশ সদর দপ্তরের পিআইও শাখায় কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক আবু সায়েদের ছেলে সাইফুর রহমান আসাদ (১৮) গত ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যার পর এক বন্ধুকে নিয়ে সিলেটের শাহজালার (রাহ.) মাজার এলাকায় যান। কিছুক্ষণ পর এসএমপি’র পুলিশ লাইনসে কর্মরত তিন পুলিশ সদস্য এসে আসাদ ও তার বন্ধুকে জাপটে ধরেন এবং তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি চালিয়ে ইয়াবা পেয়েছেন দাবি করে গ্রেফতারের হুমকি দেন।
তখন আসাদ এর প্রতিবাদ করে পুলিশে কর্মরত তার বাবার পরিচয় দেন। তৎক্ষণাৎ বিষয়টি আসাদ তার বাবাকে ফোন করেও জানান। পরে আসাদের বাবার মাধ্যমে খবর পেয়ে এসএমপি’র শাহপরাণ থানায় কর্মরত এসআই জামাল ভুঁইয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে আসাদ ও তার বন্ধুকে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যান। সেখানে মুচলেকার মাধ্যমে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনা জানাজানি হলে এসএমপি কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ দ্রুত পদক্ষেপ নেন এবং মহানগর পুলিশ লাইনসের এডিসি (ফোর্স) সালেহ আহমদকে এ বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্ত শেষে ২৪ নভেম্বর কমিশনার বরাবরে প্রতিবেদন দাখিল করেন তিনি। তদন্তে তিন কনস্টেবলের ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টার সত্যতা পাওয়া যায়। পরে অভিযুক্ত তিন পুলিশ সদস্যকে সাময়ীক বরখাস্ত করা হয়।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- কনস্টেবল মো. ঝুনু হোসেন জয়, ইমরান মিয়া ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
অপরদিকে, গত ৩ ডিসেম্বর (শনিবার) সিলেট মহানগর পুলিশ লাইনসে ঘটেছে মারামারির ঘটনা। ওইদিন নায়েক পদমর্যাদার এক পুলিশ শটগান দিয়ে আঘাত করে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পদমর্যাদার এক সদস্যের মাথা ফাটিয়ে দেন। ঘটনার পরদিন দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়ীক বরখাস্ত করা হয়। সে দুজন হলেন- এএসআই মো. রুবেল মিয়া ও নায়েক প্রনজিত।
সূত্র জানায়, এএসআই মো. রুবেল মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশ লাইনসে স্ট্যান্ডবাই ডিউটি দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে স্ট্যান্ডবাই পার্টি ফল-ইন করতে গিয়ে নায়েক প্রনজিতকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে স্ট্যান্ডবাই পার্টির ইনচার্জ মেজরকে জানানো হলে মেজর বলেন, প্রনজিতকে এলপি গেটের পাশে দেখা গেছে। পরে ইনচার্জ রুবেল মিয়া নায়েক প্রনজিতকে ডেকে আনার জন্য পাঠান নায়েক শরীফ মিয়াকে। কিন্তু প্রনজিত ফিরে স্ট্যান্ডবাই পার্টির ইনচার্জ রুবেল মিয়ার সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে হাতাহাতিতে লিপ্ত হন তারা। তখন প্রনজিত তার নামে ইস্যুকৃত শটগান দিয়ে রুবেলের মাথায় আঘাত করলে তার মাথা ফেটে যায়। পরে তাকে সিলেট বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরদিন এসএমপির উপ-কমিশনার (সদর ও প্রশাসন) মো. কামরুল আমীন স্বাক্ষরিত এক আদেশে রুবেল ও প্রনজিদতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এসব বিষয়ে এসএমপি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সুদীপ দাস বলেন, ‘ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা অবশ্যই ঘৃণ্য কাজ। এ ব্যাপারে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। এছাড়া দ্বিতীয় ঘটনায়ও নেওয়া হয়েছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।