শিশু সাবিহা হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের

সিলেটে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে এক বছর ৫ মাস বয়সী শিশু সন্তানকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার ঘটনায় মা নাজমিন আক্তার (২৮) কে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে এসএমপির শাহপরান থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেন শিশুটির বাবা সাব্বির হোসেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান। থানায় মামলা নং- ১১, তারিখ- ০৯.০২.২০২২ইং, ধারা ৩০২।
মামলায় শুধুমাত্র নাজমিন আক্তারকে আসামী করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী সাব্বির হোসেনের উপর প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে শিশু সন্তানকে হত্যা করেন নাজনিন।
নাজমিন আক্তার এখনো শাহপরান থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, তাকে এই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। তাকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেওয়ার জন্য আমারা আদালতে তুলছি। নাজনিন সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বাদেপাশা ইউনিয়নের কালিকৃষ্ণপুর গ্রামের মো. জিয়া উদ্দিনের মেয়ে। তিনি সিলেটের একটি বেসরকারি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষিকা।
জিজ্ঞাসাবাদে নাজমিন আক্তার পুলিশকে বলেন, ‘আমি কাউকে ফাঁসাব না। সাব্বিরকেও ফাঁসাব না। তাকে ফাঁসালেও সে অল্প শাস্তিতে পার পেয়ে যাবে। তার বিচার আল্লাহ করবেন। আমি আমার মেয়েকে খুন করেছি। আমার ফাঁসি হোক।’ ক্ষুব্ধ এই নারী বলেন, ‘বিয়ের পর আমার স্বামী বিদেশ চলে যায়। চার বছর সেখানে থাকা অবস্থায় সে আমার ভরণপোষণ দেয়নি। আমি স্কুলে শিক্ষকতা করে এবং টিউশনি করে চলেছি। পরে দেশে ফিরে আমাকে অনেক বুঝিয়ে আবার সংসার শুরু করে। তখন আমি গর্ভবতী হই। আমাকে গর্ভবতী রেখেই সে আবার কাতার চলে যায়।
নাজমিন অভিযোগ করে বলেন, ‘বিদেশে গিয়ে সাব্বির অভিযোগ তোলে- আমার গর্ভের সন্তান তার নয়। আমি তখন ডিএনএ টেস্টের কথা বলি। কিন্তু সাব্বির ও তার পরিবার তা না করে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে থাকে। আল্লাহর কী রহমত! জন্মের পর দেখা গেল মেয়ের চেহারা অবিকল সাব্বিরের মতো। চোখ, ঠোঁট, মাথার চুল, হাসি সব একই রকম। ’
এরপর তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘সাব্বির ১৫ দিন আগে দেশে এসেছে। কিন্তু একবারও মেয়েকে দেখতে আসেনি। বরং আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করছে। এই দুঃখে আমি আমার মেয়েকে হত্যা করেছি।’
এর আগে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট শহরতলির শাহপরান নিপোবন এলাকায় নিজের দেড় বছর বয়সী শিশুকন্যা সাবিহাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ নাজনিন আক্তার (২৮)।পারিবারিক কলহের জেরে নাজমিন তার মেয়ে সাবিহাকে বালিশচাপা দেন।
এ সময় সাবিহার চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে সাবিহাকে এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন নাজমিনের বোন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ সময় নাজমিনও হাসপাতালে আসেন।পরে তিনি হাসপাতালে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করলে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। থানায় গণমাধ্যমের সামনে তিনি মেয়েকে হত্যার বিষয়টি স্বীকারও করেন।
পুলিশ জানায়- সিলেটের গোলাপগঞ্জের কালিকণ্ঠপুরের বাসিন্দা নাজমিন বেগমের সঙ্গে প্রবাসী সাব্বির আহমদের বিয়ে হয়েছে কয়েক বছর আগে। গত দেড় মাস আগে সাব্বির আহমদ প্রবাস থেকে দেশে ফিরেন। তার আগে থেকেই নাজনিনের সঙ্গে সাব্বিরের পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়। এ কারণে দেশে ফিরলেও নাজমিনের সঙ্গে ঘর সংসার করছিলেন না।