সংসদে যেতে চান বিশ্বনাথের মেয়র মুহিব!
পৌরসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের মাথায় এবার এমপি (সংসদ সদস্য) হতে চান প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরসভার প্রথম মেয়র মুহিবুর রহমান।
২০২২ সালের ২নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্বনাথ পৌরসভা নির্বাচনে ৫হাজার ২১১ ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে জগ প্রতীকে ৮হাজার ৪৭৪ ভোট পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। আর নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩হাজার ২৬৩টি। কিন্তু মেয়র নির্বাচনের বছর পূর্ণ হবার আগে থেকেই সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনের প্রার্থীতার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। গণসংযোগ করে জানাচ্ছেন আগামি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের প্রার্থী হবার কথা। সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকেও এ নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন তিনি ও তার কর্মী- সমর্থকেরা।
ওসমানী নগরের কৃষক জৈন উল্লাহ, ফজলু মিয়া, ক্ষুদ্র ব্যববাসয়ী সিরাজ মিয়া, বিশ্বনাথের কৃষক নজরুল ইসলাম, রুয়েল আহমদ বলেন, ২০১৩ সালের পর থেকে সিলেট-২ আসনে সৎ নিষ্ঠাবাণ ও পরোপকারী কোন সংসদ সদস্য নির্বাচিত না হওয়ায় বিশ্বনাথ ওসমানীনগরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন একেবারে মুখ তুবড়ে পড়ে আছে। এজন্য মেয়র মুহিবুর রহামনের মত একজন জনপ্রতিনিধির খুবই প্রয়োজন।
জানা গেছে, ১৯৭৭ সালে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সদস্য হাবর পর ১৯৭৮ সালে বিশ্বনাথ থানা আওয়ামী লীগের তৎকালীণ অর্থ-সম্পাদক এবং ১৯৮০ সালে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নির্বাচিত হন মুহিব। এরপর ১৯৮৫ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বর্তমান পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান।
এরপর ১৯৯১ সালে সিলেট-২ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন মুহিব। এসময় তার প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী জাতীয় পার্টির মকসুদ ইবনে আজিজ লামার কাছে হেরে যান তিনি। ২০০১ সালে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বিএনপির প্রার্থী নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধীতা করেও সামান্য ভোটে ইলিয়াস আলীর কাছে পরাজিত হতে হয় তাকে।
২০০৩ সালে আবারও আওয়ামী লীগে যোগদান করে রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। আর ২০০৪ সালে তৎকালীন বিএনপি দলীয় এমপি এম ইলিয়াস আলীর দাপটে যখন মাঠ ছাড়া আওয়ামী লীগ ঠিক তখন সরকার বিরোধী আন্দোলনে নিজের সমর্থকদের নিয়ে মাঠে নামেন মুহিব। কেন্দ্র ঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে তিনি ও তার অনুসারীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়াতে হয়। এসময় বিশ্বনাথ-রামপাশা রোডের তার বাসভবনের সামনে সংঘর্ষকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ছাত্রদল নেতা আনু। এঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৩মাস জেলও খাটেন তিনি। এছাড়া বিএনপির দায়ের করা একাধিক রাজনৈতিক মামলায়ও জেল খাটেন মুহিব।
দূর্দিনে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় ২০০৮ সালে তৃণমূল আওয়ামী লীগের সমর্থনে দলীয় মনোনয়ন পান মুহিব। কিন্তু মনোনয়ন চুড়ান্ত হবার একদিন পর মনোনয়ন পেয়ে যান যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। তারপর স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও দলীয় নেতাকর্মীদের চাপে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তিনি। ওই নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এম ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে এমপি হন শফিকুর রহমান চৌধুরী। তারপর ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরীকে পরাজিত করে ২য় বারের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মুহিবুর রহমান।
এদিকে ২০১৪ সালের ৫জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগত কারণে সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। ফলে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন মুহিবুর রহমান। কিন্তু উপজেলায় জিতলেও মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সেই ইয়াহইয়া চৌধুরীর কাছে পরাজিত হতে হয় তাকে। নির্বাচনে হেরে যাবার পর ওই বছরের শেষের দিকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান মুহিব।
তারপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক বর্তমান সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী। এরপর আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে নৌকার পক্ষে প্রচারণায় নামেন মুহিব। কিন্তু দুই চৌধুরীর কাউকে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে তৎকালীণ সময়েও মহাজোটের শরিকদল জাপাকে এ আসনটি দেওয়া হলে নিজেই প্রার্থী হয়ে যান মুহিব। এরপর ওই নির্বাচনে গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খানকে নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর পরিবার, কর্মী ও সমর্থকরা সমর্থন দেওয়ায় তার (মোকাব্বির) কাছে আবারও হারতে হয় মুহিবকে।
তারপর ২০২২ সালের ২নভেম্বরের পৌরসভা নির্বাচনে বিশাল ভোটের ব্যবধানে বিশ্বনাথের প্রথম মেয়র নির্বাচত হন মুহিবুর রহমান।
প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, সংসদ নির্বাচেন যতবারই প্রার্থী হয়েছেন ততবারই ষড়যন্ত্র করে থাকে পরাজিত করা হয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে নিজের দলের (জাতীয় পার্টি) কর্মী হরমুজ আলীকে হত্যা করা হলে তাকে জোরপূর্বক বিএনপির কর্মী বানিয়ে মিছিল করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। আর এভাবেই তখন নির্বাচনী মাঠ নষ্ট করে তাকে পরাজিত করা হয়েছিলো বলে জানান তিনি।
জনগণ বারবারই তাকে চাচ্ছে, তাই তিনি আগামি সংসদ নির্বাচন করতে চান জানিয়ে ময়ের মুহিব বলেন, আইন অনুযায়ী মেয়র পদ রেখেই সংসদ নির্বাচন করতে পারবেন জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার ‘পৌরসভা’ আইনের ১৯/২ ধারায় বলা আছে, কোন ব্যক্তি অন্য কোন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি মেয়র পদে থাকার অযোগ্য হবেন। আর ৩৩ ধারায় বলা আছে, কোন মেয়রসংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে মেয়রের পদ শূন্য ঘোষিত হবে।