সিলেটে দালালদের ‘বিশেষ চিহ্ন’ ছাড়া সহজে পাসপোর্ট মিলে না
দালালের সহায়তা ছাড়া পাসপোর্টের আবেদন করা হলে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। আর দালাল ধরলে আবেদনগুলোতে ‘বিশেষ চিহ্ন’ দেওয়া থাকে। চিহ্নধারী আবেদনকারী ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি তোলায় অগ্রাধিকার পাওয়াসহ দ্রুত পাসপোর্ট পান। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা চললেও সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেই।
সিলেটে পাসপোর্ট–সংক্রান্ত জটিলতা ও হয়রানি দূর করতে মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে অংশীজনদের সমন্বয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ভুক্তভোগীরা এসব অভিযোগ করেন।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও বিভাগীয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে এ সভা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন। সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) দেবজিৎ সিংহের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পুলিশের সিলেট রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ ও বিভাগীয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম। সভায় বক্তারা অভিযোগ করেন, দালালদের দৌরাত্ম্যে পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অতিরিক্ত দুই হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে দালালেরা পাসপোর্ট করে দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আলোচনায় অংশ নিয়ে সিলেটের পাসপোর্ট কার্যালয়ে নিজেদের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অংশীজনদের আলোচনায় পাসপোর্ট করতে গিয়ে মানুষের সাতটি ভোগান্তির বিষয় বেশি উঠে এসেছে।
এগুলো হলো দালালদের ‘বিশেষ চিহ্ন’ ছাড়া আবেদন গ্রহণে অনীহা, আবেদন শতভাগ সঠিক থাকলেও টাকা না দেওয়ায় কর্মকর্তাদের দ্বারা ইচ্ছাকৃত ভোগান্তি সৃষ্টি, রোহিঙ্গা পরীক্ষার মাধ্যমে হয়রানি, নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট না পাওয়া, সার্ভার ডাউন-জাতীয় সংকট এবং পাসপোর্ট কার্যালয়ে স্থান ও জনবল সংকট। এর বাইরে পাসপোর্ট পেতে যে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হয়, সেখানেও টাকা ছাড়া সেবা মেলে না বলেও অংশীজনেরা বক্তব্যে অভিযোগ করেছেন।
সভায় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, সম্প্রতি তার পরিচিতি এক ছাত্রলীগ নেতা গুরুতর অসুস্থ হয়ে ভারতে চিকিৎসার জন্য যেতে পাসপোর্ট করতে নগদ ২০ হাজার টাকা ‘উৎকোচ’ দিয়েছেন। পাসপোর্ট কার্যালয়ের দুর্নীতির কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নাম হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৮০০ মানুষ পাসপোর্ট কার্যালয়ে গিয়ে সেবা নেন। একেকজন গড়ে দুই হাজার টাকা দিলেও ১৬ লাখ টাকার অবৈধ লেনদেন সিলেট পাসপোর্ট কার্যালয়ে হয়ে থাকে। এখানে পাহাড়সম সমস্যা। এই সভা যেন ‘আইওয়াশ’ না হয়, এখানকার মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে সমস্যার যেন সমাধান করা হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান আফসর আহমদ বলেন, পাসপোর্ট কার্যালয়কে সিলেটের মানুষ সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। এ কার্যালয়ে মানুষজন পদে পদে দুর্ব্যহারের মুখোমুখি হন। অনিয়মই এখানে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। দালাল ছাড়া এখানে কোনো সেবা মেলে না।
সভায় ২৭ জন অংশীজন বক্তব্য দেন। অংশীজনদের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিভাগীয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম বলেন, পাসপোর্টের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে তার কিছু করার নেই। কারণ, পাসপোর্টগুলো ঢাকা থেকে প্রস্তুত করা হয়। এ ছাড়া সার্ভারজনিত সমস্যার সমাধানও তার হাতে নেই। তবে পাসপোর্ট কার্যালয়ের ভেতরে দালালদের তৎপরতা নেই বলে তিনি দাবি করেন।
ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, খোলা মনে আলাপ-আলোচনা করে অনেক সমস্যার সমাধান হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ বলেন, দালালমুক্ত কার্যালয় কীভাবে করা যায়, সেটা পাসপোর্ট কার্যালয়ের পরিচালককেই নিশ্চিত করতে হবে। তবে এ বিষয়গুলো স্থানীয় প্রশাসন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে এবং অংশীজনদের নিয়ে সভা করবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন সমস্যাগুলো সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। সমস্যা জানায় এখন সমাধানে সুবিধা হবে। সিস্টেমের ফাঁকফোকরগুলো জানা থাকায় এখন ভুক্তভোগীদের সমস্যা দূর করতে স্থানীয় প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে।